বাংলার ভোর প্রতিবেদক
পুকুর শ্রেণির জমিতে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আইনগত কারণ দেখিয়ে পুকুর শ্রেণির জমিতে বাড়ির প্লান অনুমোদন দিচ্ছে না যশোর পৌরসভা। এতে করে ঋণ নিয়ে জমি কিনে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার নাগরিক। তারা অবিলম্বে এ বিধিনিষেধ অপসারণ, অন্যথায় তাদের জমি অধিগ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আবাসভূমি শ্রেণি সংশোধন আন্দোলন কমিটি যশোরের উদ্যোগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাব যশোরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সদস্য আব্দুল মতিন জানান, তারি জমি কেনার সময় পুকুর শ্রেণির জমিতে ভবন নির্মাণে কোন ধরনের জটিলতা বা সরকারি বিধি নিষেধ ছিল না। বিশেষ করে তিনি দুই যুগ আগে যশোর শহরের পশ্চিম বারান্দীপাড়া রাঙ্গামাটি গ্যারেজ এলাকায় রাস্তার পাশে ১০শতক জমি কিনেছিলেন। ওই জমি কেনার আরো ২০ বছর আগে ওই জমিতে পুকুর ছিল। সেই জমিতে অনেকেই বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। কিন্তু বাড়ি নির্মাণে তিনি একটু পিছিয়ে পড়েন। ২০২২ সালে বাড়ি নির্মাণের জন্য যশোর পৌরসভায় প্লান জমা দেন। এরপর পৌর কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে কাজও শুরু করেন। দশতলা ভবনের বেজমেন্ট নির্মাণ সম্পন্ন হলে হঠাৎ প্লান অনুমোদন সম্ভব নয় বলে কাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি পুকুর শ্রেণির জমির প্লান অনুমোদন বন্ধ করা হয়েছে। এ আদেশের ফলে কেবল তিনি নন থমকে যায় শত শত মানুষের বাড়ি নির্মাণের কাজ। গত তিন বছরে যার সংখ্যা সহস্রাধিক ছাড়িয়েছে। ঋণের জালে জড়ানো ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ এখন না পারছেন বাড়ি বানাতে না পারছেন জমি বিক্রি করতে। ফলে উভয় সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে ভূমি অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে কোন কূল কিনারা হয়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শত শত জমির মালিক শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক শ্রেণি পরিবর্তনের এখতিয়ার রাখলেও তা অনুমোদন করেছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে বরিশাল শহরের ঝাউতলা এলাকার শতবর্ষী একটি পুকুর ভরাট ও দখল বন্ধে হাইকোর্টে রিট করে একটি এনজিও। ২০২০ সালে ওই রিটের রায় দেয়া হয়। রায়ে আলোচিত পুকুরটির দখল ঠেকাতে প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে তা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন বিচারক। একই রায়ে দেশের সকল মহানগর, সিটি কর্পোরেশন, বিভাগ, জেলা ও পৌর শহরের ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ড করা পুকুরগুলোকে ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০’ এর ২ (চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০২২ সাল থেকে এ আদেশটি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, তারা দেশের উচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ওই রায়ের কারণে ঋণ নিয়ে, জমানো টাকা ভেঙ্গে কেনা জমিতে মাথা গোঁজার জন্য বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। এমনকি জমি বিক্রিও করতে পারছেন না। এজন্য সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে সংরক্ষণ করতে চাইলে তা অধিগ্রহণ করুক। অন্যথায় ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরকে প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে সংরক্ষণের নীতি থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসার দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক প্রফেসর ড. শেখ আমানুল্লাহ, মনজুর হোসেন, বিথিকা পাল, বরুণ কুমার, রফিকুল ইসলাম, নাজমুল কবীর, রিপন কুমার মল্লিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version