বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে খুলনা বিভাগীয় বৈষম্যহীন নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় কথা ছিলো শুক্রবার বিকেল চারটায়। সভাস্থল যশোরের পিটিআই মিলনায়তনে পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই উপস্থিত হন খুলনা বিভাগের ১০ জেলার আমন্ত্রিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। তবে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনার কারণে চারটার প্রোগ্রাম তিন দফা সময় পরিবর্তন করে শুরু হয় রাত সাড়ে আটটায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রহরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। অনেককেই ক্ষোভ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যেতে দেখা গেছে। আবার যারা দলের শীর্ষ পদধারী তারা চলে যেতে না পারলেও ক্ষোভ নিয়েই ধৈর্য ধরে অনুষ্ঠান শেষ করেন।
সরেজমিনে ঘুরে ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ ওঠে সারাদেশের যুবদলের নেতাকর্মীদের। ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় যুবদলের নেতাকর্মীদের বহিস্কারও করা হয়েছে। তাই দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দলের পুনঃগঠনে নেতাকর্মী সাথে মতবিনিময় শুরু করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যহীন নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় যশোরে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। শহরের পিটিআই মিলনায়তনে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভা শুরু হওয়ার কথা ছিলো বিকেল চারটায়। তবে পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই উপস্থিত হন খুলনা বিভাগের সকল জেলার শীর্ষ নেতাকর্মী, কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। তবে অব্যবস্থাপনার কারণে বিকাল চারটায়ও প্রোগ্রাম শুরু করতে পারেনি আয়োজকরা। পরবর্তীতে অনুষ্ঠান শুরুর সময় ঘোষণা করা হয় সন্ধ্যা ৭টায়। সন্ধ্যা ৭টায়ও শুরু না হওয়ার পরবর্তীতে আবারও আয়োজকরা তৃতীয় দফাতে সময় ঘোষণা করেন আটটার দিকে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও আটটার সময়ও সভা শুরু না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতাকর্মীরা। অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সভা স্থল ত্যাগ করে নিজ নিজ জেলাতে চলে যেতে দেখা যায়। অনেকে আবার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে অডিটোরিয়ামের চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় সভাস্থলের অডিটোরিয়ামের বাইরে যেয়ে এক জেলার নেতাকর্মীরা অন্যজেলার নেতাকর্মীদের সাথে হট্টগোল ও আয়োজকদের প্রতি ক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ‘সেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। এর পর দুপুরের আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোরে এসেছি। দুপুরে আয়োজকরা খাবার দিলেও প্রোগ্রাম সঠিক সময়ে শুরু করেনি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা তারপরেও সভা শুরু হয়নি। শেষ মেষ রাত ৮টার পরে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এদিকে দেরি করে অনুষ্ঠান শুরু হওয়াতে অনেকেই চলে যান।’
ঝিনাইদহ জেলা যুবদলের কয়েক নেতাকর্মী জানান, ‘দুপুরের প্রোগ্রাম হলো রাতে। কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি প্রধান অতিথি থাকাতে পদধারী নেতারা চলে যেতে পারেনি। তবে তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। শেষে অনুষ্ঠান হলেও তা হয় এলেমেলো। সময় স্বল্পতার কারণে সবাই বক্তব্যও দিতে পারেননি, অনেকেই অনেক সাংগঠনিক সমস্যার কথা নিয়ে আসলেও কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিকে জানাতে পারেননি সময়ের অভাবে।’
এদিকে রাত সাড়েটার দিকে মঞ্চে উঠেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। তার বক্তব্যকালে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিত দলের কেউ সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে কোন ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা যুবদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের দলের নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা বিরোধী এবং সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কেবল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয়, প্রয়োজনে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। মতবিনিময় সভায় যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা সঞ্চালনা করেন।
যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ বলেন, ‘বাগেরহাট জেলার যে সব কাউন্সিলর ও ডেলিগেট নেতাকর্মীরা নিমন্ত্রিত ছিলো, তাদের অনেকেই দলীয় সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে গতকাল বহিস্কার হয়েছেন। ফলে তারা আসতে পারেনি। তালিকা নিয়ে গোলমাল হওয়াতে বাগেরহাট জেলার নেতাকর্মীদের দেরি করে আসার কারণে অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের কোন সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি। এমনকি কেউ চলে যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।’