ইব্রাহীম সানা, পাইকগাছা
পাইকগাছায় পানির অভাবে চিংড়ি ও ধান চাষের আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। পানির অভাবে ক্ষেত ফেটে চৌচির। চিংড়ি চাষী ও জমির মালিকরা হতাশ।
পাইকগাছার পুরাইকাটি বিলে লবণ পানি তুলতে না দেয়ায চিংড়ি চাষের আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। আবার বিলে মিষ্টি পানির খাল বা পানির ব্যবস্থা নেই। দুই বছর ধরে লবণ পানি আর মিষ্টি পানির সঠিক কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিলে মাছ বা ধান আবাদ হচ্ছে না। এর ফলে চিংড়ি চাষি, ঘের মালিক ও জমির মালিকরা অর্থিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। অনেকে ব্যাংক লোন শোধ করতে পারছে না, কোন ফসল না পাওয়ায় ধার দেনা করে চলছে সংসার। এমতাবস্থায় চাষি ও জমির মালিকরা সঠিক সিদ্ধান্ত চান।
উপজেলার পুরাইকাটি, আওড়, কাজির বিল ও ধোড়ামারি বিল মিলে প্রায় ১৩শত বিঘা জমির মধ্যে ১২শত বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। লবণ পানি তুলতে না দেয়ায চিংড়ি চাষ বন্ধ রয়েছে আর মিষ্টি পানি না পাওয়ায় কৃষকরা এসব জমিতে বোরো আবাদ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল এ জমির দিকে নজর দিচ্ছেন না।
পাইকগাছায় মৎস্য চাষি ঘের মালিকরা লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ করতে চান। অন্যদিকে একটি পক্ষ লবণ পানি তোলার বিপক্ষে তারা মিষ্টি পানিতে ধান চাষের পক্ষে। চিংড়ি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বড় অংশ চিংড়ি থেকেই আসছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষ বন্ধ হলে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাঁকড়া, মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বেন।
পুরাইকাটি গ্রামের চাষী হাজী আব্দুস সামাদ মোড়ল বলেন, গত বছর ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে ৫ মণ ধান পেয়েছি। চাষ করতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। লবণ পানির প্রভাব ও নোনা হাওয়ায় ধান ভালো হচ্ছে না। ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এলাকার কৃষক জাহিদ হোসেন বলেন, বেশিরভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। কৃষক নবজান সরদার ও তোরাফ আলী গাজী বলেন, বোরো মৌসুমে ধান ভালো হয় না। আবাদ করা খরচ ওঠে না।
বিলের প্রায ১২শত বিঘা জমির মধ্যে একশত বিঘাও কম জমিতে বোরো আবাদ করা হলেও বিস্তীর্ণ জমি খালি পড়ে আছে।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক বলেন, পাইকগাছায় প্রায় চার দশক লবণ পানিতে চিংড়িসহ মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। এ এলাকা লবণ পানি অধ্যুষিত। নিচু এলাকাকে চিংড়ি চাষের জোন তৈরি করতে হবে। আর যে বিলের জমি মিষ্টি পানিতে ধান চাষ করার উপযোগী সে সকল জমিতে পর্যায়ক্রমে লবণ পানি উঠানো বন্ধ করে ধান ও মাছ চাষ করতে হবে। আর আধুনিক পদ্ধতি ও পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করলে জমিতে লবণ পানি ঢোকানোর প্রয়োজন হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ জানান, উপজেলা আশির দশক থেকে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। এ এলাকায় চিংড়ি ঘেরের মাটি দীর্ঘদিন লবণ পানিতে ডুবে থাকায় মাটির অনুজ ও উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। লবণ পানিতে মৎস্য চাষের জমি পর্যায়ক্রমে মিষ্টি পানিতে ধান, মাছ ও সবজি চাষের আওতায় আনলে সব দিক দিয়ে ভাল হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, বোরো মৌসুমে আবাদী জমি পতিত থাকার বিষয় খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।