স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি স্বজনকে দেখতে এসেছেন আবদুর রহমান। তাঁর জন্য কিনতে চান বেদানা ফল। কিন্তু দোকানে গিয়ে দাম শুনে পড়েন বিড়ম্বনায়। দাম চড়া হওয়ায় কিছুটা সাশ্রয়ের আশায় ঘোরেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। অবশেষে শুধু মাল্টা কিনে স্বজনকে দেখতে যান তিনি। শুধু আবদুর রহমান নয়, তার মত স্বল্প আয়ের মানুষের সাধ থাকলেও ফল কেনার সাধ্য হচ্ছে না অনেকেরই।
আব্দুর রহমান বলেন, কিছু দিন আগেও যে বেদানার দাম ২৮০ টাকা ৩০০ টাকা ছিল তা এখন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরীব মানুষেরা অসুস্থ হলে একটু ফলমূলও কিনে খেতে পারছে না। দিন দিন ফলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তাজা ফল আমদানিতে অতিরিক্ত সম্পুরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ ফ্রেস ফুটস ইমপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা ধর্মঘটে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ফল আমদানি বন্ধ হয়েছে। সোমবার থেকে দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ করেছে আমদানিকারকরা। ফল আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা পড়ছে। সেই সাথে খোলা বাজারে ফল সরবরাহ কমেছে। যার প্রভাব পড়ছে দামেও।
ভারত থেকে যে সকল খাদ্য দ্রব আমদানি হয় এর মধ্যে বড় একটি অংশ রয়েছে আলু, আঙুর,কমলা, বেদানা, মালটা ও আঙুরসহ বিভিন্ন প্রকারের তাজা ফল। ফল আমদানির ক্ষেত্রে আগে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় করতো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতিকেজি ফলে সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো ১০১ টাকা। হঠাৎ করেই গত ৯ জানুয়ারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের নতুন এক নির্দেশনায় ফল আমদানির উপর সম্পুরোক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারন করে। এতে বর্তমানে কেজিতে শুল্ককর ১৫ টাকা বেড়ে দাড়িয়েছে ১১৬ টাকা। এতে আমদানি খরচ বাড়ায় দাম বাড়িয়েছে খোলা বাজারে বিক্রেতারা। রমজানের ঠিক আগমুহূর্তে ফলের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের ফল ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
জানা গেছে, বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৯ জানুয়ারী বাংলাদেশ ফ্রেস ফুটস ইমপোর্ট এ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে আল্টিমেটাম দেয় আগামী ০৩ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বাড়তি শুল্ককর তুলে না নেওয়া হলে ৪ ফেব্রুয়ারী থেকে দেশের সব স্থলবন্দর, নৌবন্দর দিয়ে তাজাফল আমদানি বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ড বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারে কোন সিদ্ধান্ত না জানানোয় আমদানি কারকরা বাধ্য হয়ে ফল আমদানি বন্ধ রেখেছে। আপাতত ৪ ও ৫ ফ্রেব্রুয়ারী দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে বর্ধিত শুল্ককর তুলে না নিলে পরবর্তীতে আবারো কর্মসুচী দিবে বাংলাদেশ ফ্রেস ফুটস ইমপোর্টস এ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে, শুল্ককর বৃদ্ধির কারনে বর্তমানে খুরচা বাজারে এক কেজি আপেল প্রকার ভেদে ৩০০ থেকে ৩৬০, মালটা কেজি ৩০০ থেকে ৩২০, কমলা ২৫০ থেকে ৩০০ এবং আঙুর প্রকার ভেদে ৪৫০ থেকে ৫০০, বেদানা ৪০০ থেকে ৫৫০ , নাসপাতি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বেনাপোল বন্দরে ফল আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব কমেছে। চলমান ধর্মঘটে দুই দিন ফল আমদানি বন্ধে বন্দর থেকে সরকার ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে বলে বলছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল বন্দরের ফল আমদানিকারক শেখ মেহেদি হাসান বলেন, ২০শতাংশ শূল্ক বাড়ানোর কারণে ফল আমদানি বন্ধ রেখেছেন তারা। দুই দিনের মধ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফল আমদানি বন্ধ রাখা হবে। এত বাড়তি দাম দিয়ে ফল এনে বাজার পর্যন্ত পৌছাতে খরচ পড়ে যায় বেশি। বাড়তি খরচের চাপ পড়ে সাধারণ ভোক্তার উপর। আমরা দাবি করি সরকার আমাদের আমদানি শূল্ক কমানোর ব্যবস্থা করুক।
আল মামুন নামে সাধারণ এক ভোক্তা বলেন, বাজারে সব ফলের দাম বৃদ্ধি। এমনকি অনেক দোকানে ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আগে দুইকেজি ফল কিনলে এখন এক কেজি কিনতে হচ্ছে। রোগীর খাবার হিসেবে ফল বেশি ব্যবহার হয়। বাড়তি দামের কারণে রোগীরাও ঠিকমত ফল কিনে খেতে পারছে না।
যশোর জেলা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন চুন্নু বলেন, ফল আমদানি করে বেশি দিন রাখা যায় না। মালের উপর ডিউটি (শুল্ক) পড়ছে বেশি। বেশি ডিউটি দিয়ে ফল আমদানি করে ব্যবসা করা কঠিন। মাল আমদানি বন্ধ থাকলে বাজারে সংকট তৈরি করে, দাম আরও বাড়বে।
বেনাপোল ওয়ারহাউজের সুপারিন্টেন্ড তানজিবুর রহমান বলেন, বেনাপোলের ফল আমদানিকারকরা দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ রেখেছে। এর আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ গাড়ি ফল আমদানি হত। দিন দিন আমদানির সংখ্যা কমছে। দুই দিন ফল আমদানি বন্ধ রাখার ফলে সরকার বড় একটা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। খোলা বাজারে ফলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।