নিজস্ব প্রতিবেদক, ডুমুরিয়া
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে ডুবে যায় বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এতে করে বছরের অধিকাংশ সময় এ এলাকা থাকে জলমগ্ন। পানিতে তলিয়ে যায় মাঠ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাছের ঘেরসহ আবাদি জমি। সেই সাথে তলিয়ে যায় বসতভিটা। আর বিল ডাকাতিয়ায় বসবাসকারী হাজারো মানুষের দুর্ভোগ কাটে না।
এ বছরও সাম্প্রতিক ভারি বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাওয়া বিল ডাকাতিয়ার মানুষগুলো দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। শুকনা খাবার, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে এই এলাকায় বসবাসকারী লোকগুলোর। শ্রমজীবী মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় রুটি রুজিও বন্ধ হওয়ার পথে। জলমগ্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির অভাব। চলাচলের একমাত্র বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে ডুংগা নৌকা ও কলার ভেলা। এদিকে, পানিবন্দি মানুষগুলোর অভিযোগ এ পর্যন্ত কেউ আমাদের খোঁজ খবর নিতে আসেনি।
সরজমিনে বিল ডাকাতিয়ার রংপুর এলাকায় গেলে দেখা যায়, এ এলাকার অধিকাংশ বসতভিটা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের ভিতর পানি, এমনকি কোথাও কোথাও হাঁটু পানি। অনেক বাড়িতে হাঁটু সমান পানির উপর খাটে বসে ছোট বাচ্চা নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় অনেক মা’কে। চোখে মুখে তাদের অনিশ্চয়তার ছাপ।
এই এলাকার পানিবন্দি একজন ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, পানিতে সব তলায় গেছে। ডাকাতির বিলে না হলেও কয়েক হাজার পরিবার আছে। প্রায় সব বাড়িতে পানি উঠেছে। খাওয়া-দাওয়ার জন্য রান্না করার কোন উপায় নেই। মানুষগুলো শুকনো খাবার খেয়ে কোনমতে বেঁচে আছে। আমি ব্যবসা করি আমার বাড়ি গরু আছে। গরুর কোন খাদ্য খাবার নেই। সব পানিতে ডুবে গেছে।
রংপুর গ্রামের দিলীপ সরকার বলেন, আমাদের রংপুর এলাকার বাড়িঘর সব তলায় গেছে। ঘরে সাপ ঢোকার ভয়। ছেলে মেয়েগুলো খেয়ে না খেয়ে থাকছে। অসহায় অবস্থায় আমরা দিন কাটাচ্ছি। রংপুরের মানুষ, ডাকাতিয়ার বিলের মানুষ বড় কষ্টে আছি। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করতিছি। আবার শুনছি বর্ষা হবে। এবার বর্ষা হলে আর থাকার কোন উপায় থাকবে না। না খাইয়ে আরো দিন কাটাতে হবে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া বারান্দায় উঁচু কাঠের পাঠাতানের উপর বসে রান্না করতে দেখা যায় এক মহিলাকে। তিনি বলেন, বর্ষাকাল আসলেই আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়। কি আর করার গরু ছাগল হাঁস মুরগি কোন রকম করে ডাঙ্গার দিকে নিয়ে গেছি। ছেলে মেয়েদের ডাঙ্গার দিকে পাঠায় দিছি। সাপ, পোকের ভয়। আতঙ্কের ভিতর দিয়ে বসবাস করছি। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, ইতিমধ্যে পানি সরানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি অতিদ্রুত পানি নিস্কাশন হয়ে যাবে।