বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ছোট-বড় হরেক রকমের গাছপালা। এসব গাছের মধ্যে শতবর্ষী এক বটগাছ। বটগাছের ডালে ডালে উল্টো হয়ে ঝুলে রয়েছে হাজারো বাদুড়। দেখলে মনে হবে এ যেন বাদুড়ের সাম্রাজ্য! আর এই বাদুড়ের কারণে এলাকা পেয়েছে নতুন নাম। বাদুড়ের বসবাসের কারণে জায়গাটির নাম হয়ে গেছে বাদুড়তলা। যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের সাড়াপোলের পার্শ্ববর্তী সিরাজসিঙ্গা গ্রামে বাদুড়তলার অবস্থান।
রামনগর ইউনিয়ন শেষ হয়েছে এই বাদুড়তলায়। অসংখ্য বাদুড় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত করে রাখে জায়গাটি। অনেক বড় বড় বাদুড় বটগাছটিসহ সংলগ্ন আরো অনেক গাছগাছালিতে বসতি গড়ায় লোকমুখে স্থানটি বাদুড়তলা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গ্রামটির নাম সিরাজসিঙ্গা হলেও গ্রামটির বাসিন্দারাও নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন বাদুড়তলার বাসিন্দা বলে।
স্থানীয়রা জানান, সূর্য ডুবলে নয়, বাদুড় ঘুমাতে যায় সূর্য উঠলে। এরা বিছনায় ঘুমায় না। ঘুম পেলে এরা গাছের ডাল ধরে ঝুলে পড়ে। এ সময় মাথা থাকে নিচের দিকে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি ভ্যানচালক আবদুল ওহেদ (৬০) বলেন, ‘এখানকার যেসব বাদুড় এখনো টিকে আছে; সেগুলোর আকৃতি আগের তুলনায় অনেক ছোট। আগে এখানাকার কিছু কিছু বাদুড়ের ওজন ৩/৪ কেজিও ছিল। তিনি বলেন, আগে এখানে হাজার হাজার বাদুড় বসবাস করতো। এই একটি মাত্র গাছ না; আশপাশের আরো অনেক গাছে বসতি ছিল বাদুড়ের। ৪০/৫০ বছর আগে যখন বয়স অনেক কম ছিল; তখন দেখেছি সন্ধ্যার আগে দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুড় রাতের বেলায় খাবারের সন্ধানে যখন উড়ে যেতো, আকাশ তখন কালোয় ছেয়ে যেতো।’
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দশকে এখানে বাদুরের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এখানকার মানুষেরা এসব বাদুড়ের প্রতি সহানূভূতিশীল। এদের কেউ কখনো ক্ষতি করে না। এরা কারোর অনিষ্ট করে না। রাতের বেলায় খাবার সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দূরের কোনো এলাকায় চলে যায়। এখানকার কোনো ফলের গাছ বা ফসলে এরা হানা দেয় না। কখনো কখনো ‘কাউরা’ বা কায়পুত্র সম্প্রদায়ের (শূকর পালনকারী) লোকজন বাদুড় শিকার করতে আসে। এলাকার কারো চোখে সেটি পড়লে সাথে সাথে বাধা দেয়া হয়।
বাদুড়তলার আরেক বাসিন্দা রবিউল শেখ জানান, ‘২০ থেকে ২৫ বছর হতে চলল এখানে বাদুড়ের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আগে আরো অনেক ছিল। বিদ্যুতের সংযোগ আসলে সংখ্যা কমতে শুরু করে।
তিনি জানান, রাস্তার পাশে বড় গাছটি ঘেঁসে যখন বিদ্যুতের খুঁটি ও ট্রান্সফরমার বসানো হয় তখন বিদ্যুতায়িত হয়ে অনেক বাদুড় মারা যায়। এরপর বাদুড়ের দল বট গাছটি থেকে কয়েক’শ গজ দূরে সরে যায়। পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে বৃষ্টি শিরিষ (রেইনট্রি) গাছে বাসা বাঁধে।
তিনি আরো জানান, বছর কয়েক হলো আবারো পুরোনো বটগাছটিতে ফিরে এসেছে বাদুড়েরা। তবে অনেক বাদুড় এখান থেকে চলে যাওয়ায় সংখ্যায় কমে গেছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ডানাবিশিষ্ট উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে ১২ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে।
সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি জায়গাটি পরিদর্শনে আসার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরে বাদুড়ের বসাবাসকে গ্রামটির নাম বদলে যাওয়ার গল্প না। এটি একটি ভালোবাসা ও সহনশীলতার নিদর্শন। সেখানে প্রাকৃতির এই রহস্যময় প্রাণীগুলো বেঁচে থাকুক এমনটাই চাওয়া স্থানীয়দের।