বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যায় অভিযুক্ত এবং বিভিন্ন মামলার আসামিরা বেনাপোল সীমান্তপথে ভারতে পালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের পালাতে সহযোগিতা করছে একটি চক্র। বেনাপোল বন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরায় এই অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত দুই দিনে বেনাপোল সীমান্তের চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতা পুলিশ, বিজিবি ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার এসব নিরাপত্তাকর্মীর নজর এড়িয়ে অনেকে ঢুকে পড়েছেন ভারতে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল সীমান্তের পরিবহন কাউন্টার ম্যানেজারদের মধ্যে কয়েকজন পাসপোর্টধারীদের সেবা দেয়ার নাম করে তাদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেন। এর আড়ালে তারা অপরাধমূলক কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাদের হাত ধরে গত এক মাসে শতাধিক অপরাধী চেকপোস্ট দিয়ে সীমান্ত পার হয়েছেন। এ সময় তাদের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতকোটি টাকার বেশি অর্থ ভারতে পাচার করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিচয়ে অনেকের অবাধ বিচরণ রয়েছে সীমান্তে। তবে গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিবির সহায়তায় মাঝেমধ্যে দু-একজন ধরা পড়ছেন।
সর্বশেষ গত বুধবার বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন থেকে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় একাধিক মামলা ছিল। তার বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থায় বিগত সরকারের পক্ষ নিয়ে নিরপরাধ বিরোধী দলের মানুষকে হয়রানি করে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ সময় কৌশলে ভারতে ঢুকে পড়েন তার আরেক সাথী রয়েল কোচ পরিবহনের মালিক সঞ্জয় কুমার কুণ্ড। ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের পারাপারে সহযোগিতা করে স্থানীয় চক্রটি। সিসি ক্যামেরায় ওই চক্রের সদস্যের ছবি থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বৃহস্পতিবার ভারতে পালানোর সময় ফতুল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কিশোর আদিল হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুস্তম খন্দকারকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি ফতুল্লা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন মামলার আসামি। কাস্টমসের বন্ধ গেট খুলে কৌশলে ভারতে পাঠানোর সময় এর আগে ইমিগ্রেশনে গ্রেপ্তার হন যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব (৩৫)। এ ছাড়া তথ্য গোপন করে ভারতে ঢোকার সময় এক বিজিবি সদস্যও আটক হয়েছিলেন ইমিগ্রেশনে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে বৈধ পথে অপরাধীরা বেশি পালাচ্ছেন ভারতে। ভারত এসব অপরাধীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ায় তাদের কেউ অনিয়ম করে ভারতে গেলেও সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরছে না। কলকাতা শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করছেন। অনেক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীকে সেখানে অবাধে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।
শার্শা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম চয়ন বলেন, ‘বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে প্রভাবশালী কয়েকজন পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সম্প্রতি বিভিন্ন মামলার আসামিদের ভারতে পালাতে সহযোগিতা করছেন। ওই সব অপরাধী ভারতে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয়ে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। অপরাধীদের ভারতে পালাতে সহযোগিতা করা অভিযুক্তদের সতর্ক করা হয়েছে। সচেতন এলাকাবাসীও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি ফারুক মজুমদার বলেন, ‘কোনো অপরাধী যাতে ভারতে পালাতে না পারে, ইমিগ্রেশনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গত এক মাসে ভারতে পালানোর সময় বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের যারা পালাতে সহযোগিতা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে সিসি ক্যামেরা দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’