মণিরামপুর সংবাদদাতা
যশোরের মণিরামপুর পৌরসভার মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ কুন্ডু একজন শিক্ষার্থী। ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি তার জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন। এরপর ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পৌর পরিষদ থেকে নিজের জন্ম সনদের অনলাইন কপি সংগ্রহ করেন তিনি। এতেই বাঁধে বিপত্তি। মূল জন্ম সনদে সোহাগ কুন্ডুর জন্ম তারিখ ১২ মে ২০০৪ থাকলেও অনলাইন কপিতে আসে ১০ ডিসেম্বর ২০০৭ সাল।
সোহাগ কুন্ডুর জন্মনিবন্ধন সনদে দেখা যায়, পৌরসভার জন্মনিবন্ধন প্রস্তুতকারী শিরিনা খাতুন জন্ম তারিখের যায়গায় নিবন্ধন তারিখ বসিয়েছেন। শুধু সোহাগ কুন্ডু নয়, একই অবস্থা উপজেলার অনেকের ক্ষেত্রেই ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদে এ রকম অসংগতি দেখা দিয়েছে। একই নামে একাধিক সনদ দেয়ার পাশাপাশি তথ্যে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য ভুল। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এমন ১৮ বছরের নিচের শিশু-কিশোরেরা পড়েছে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করানোর কারণে এসব ভুল হচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি স্কুলে ভর্তি ও ভোটার তালিকার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদের অনলাইন কপি চাওয়া হয়েছে। যার ফলে নতুন করে জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইন এবং সংশোধনের জন্য পৌরসভায় ভিড় করছে দৈনিক শত শত মান্ষু। এ ক্ষেত্রে অনেকের সনদ ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কারও কারও মূল সনদের সঙ্গে অনলাইন সনদের মিল নেই। এ কারণে অনেকেই ভোটার হতে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে পারছেন না। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে গেলেই চাওয়া হচ্ছে বাবা ও মায়ের তথ্য। অর্থাৎ বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধন আগে সংশোধন করে তারপর সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখানো হচ্ছে ইউনিক আইডি পাওয়ার কারণে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে পারবেন না। ফলে মণিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। নতুন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার পর ভুক্তভোগীদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী সোহাগ কুন্ডু বলেন, পুরোনো জন্ম নিবন্ধনে আমার জন্মতারিখ ঠিক থাকলেও ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনে ভুল তারিখ এসেছে। ভুল জন্ম নিবন্ধন এখন কোনো কাজেই আসছে না। বর্তমানে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এখানে আমার জন্মতারিখ ও সাল ভুল থাকায় আমি ভোটার হতে পারছি না। সনদের ভুল সংশোধন করতে গত দুই সপ্তাহে বেশ কয়েকবার পৌরসভা পরিষদে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
খালিদ শেখ নামের অন্য একজন বলেন, দুই মাস ধরে পৌরসভায় ঘুরছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। কম্পিউটার অপারেটর বলছেন, সার্ভার নেই, সার্ভার এলে হবে। কিন্তু সার্ভার কবে আসবে তা কেউ বলতে পারছে না। এভাবে প্রতিদিন পৌরসভায় এসে হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
মণিরামপুর পৌরসভা পরিষদের সচিব কামাল হোসেন বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীদের ভুল ও ডাটা এন্ট্রি করার সময় এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে উপযুক্ত দালিলিক প্রমাণাদি নিয়ে আমাদের কাছে এলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এগুলোর সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সার্ভার সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটার আইডি কার্ড হালনাগাদের জন্য অধিক চাপের কারণে সাময়িক সমস্যা হয়েছে। তবে এখন সমস্যার অনেকটা সমাধান করা হয়েছে। এরপরও কারো সমস্যা থাকলে সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি। জন্মনিবন্ধন করতে গেলে কম্পিউটার অপারেটর অন্য দোকান থেকে ফরম পূরণ করে আনতে বলে এই বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নাই। দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।