বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে প্রায় দেড় যুগ ধরে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। যৌথ অভিযানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক ও অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান করতে পাচ্ছেন না। যশোরে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশের উদ্যোগ একেবারেই ভাটা পড়েছে। তবে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশাবাদী যশোরের পুলিশ প্রশাসন।
সূত্র জানায়, যশোর শহর ও শহরতলীকেন্দ্রিক সন্ত্রাসীদের একক নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত ছিলেন শাহীন চাকলাদার। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন। এরপর যশোর শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকেন চাকলাদার। সেই স্থান দখল করে নেন সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। বিগত সরকার পতনের সময় পর্যন্ত যশোর শহর ও শহরতলীকেন্দ্রিক সন্ত্রাসীরা স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একপক্ষ শাহীনপন্থি, অন্যপক্ষ নাবিলপন্থি।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে, যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় ভুট্টো শাওন, হাফিজ, আরবপুর এলাকার সাইদুজ্জামান বাবু ওরফে দাঁতাল বাবু, পুরাতন কসবা এলাকায় শেখ জাহিদুল ইসলাম মিলন ওরফে টাক মিলন, শঙ্করপুর ও ষষ্ঠীতলাপাড়া এলাকায় আলমগীর কবির ওরফে হাজী সুমন, বড়বাজার এলাকায় তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, উপশহর এলাকায় মনসুর ও নান্নু ওরফে কাঠ নান্নু, পালবাড়ি এলাকায় লিখন নিজ নিজ নামে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। এসব বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি, সম্পত্তি দখল, টেণ্ডারবাজির মতো গুরুতর অপরাধে যুক্ত ছিল। এ ছাড়া শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়ার নবাব, চাঁচড়া ভাতুড়িয়ার পান্নু, ভেকুটিয়ার ফকির শাহারুল, চূড়ামনকাঠি এলাকায় মুন্না, বিরামপুরের কেরামত ও চিমা সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন। এরা জমি দখল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় জড়িত ছিল। আলোচিত সন্ত্রাসীদের মধ্যে টাক মিলন ও হাজী সুমন যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। ফন্টু চাকলাদার যশোর সদর উপজেলার এবং ফকির শাহারুল আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
পুলিশ সূত্র বলছে, যশোর পৌরসভার বিলুপ্ত পরিষদে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাইদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন, শাহেদ আলম নয়ন ওরফে হিটার নয়নসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একই ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে লেবুতলার আলিমুজ্জামান মিলন, রামনগরের মাহমুদ হাসান লাইফ, নরেন্দ্রপুরের রাজু আহমেদ, চূড়ামনকাঠির মুন্নাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী লালনসহ নানা অপকর্মে যুক্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ও সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহীর বিরুদ্ধে খুন, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ আছে।
সূত্র বলছে- যশোরে গত ১৫ বছর ধরে সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে শহরের ঘোপ এলাকার সুজন, রাসেল, রেজওয়ান, সাঈদ, বারান্দি এলাকার মনির ওরফে কসাই মনির, তৌসিফুর রহমান রাসেল, আনোয়ার হোসেন সবুজ, কামাল হোসেন, গোলাম কিবরিয়া সানি, জাকির হোসেন রাজিব, সনি, আরিফ, শঙ্করপুরের হিটার নয়ন (পৌর কাউন্সিলর), জুয়েল, মানিক, বিপ্লব, রাজু ওরফে লুই, শয়ন, ষষ্টিতলা পাড়ার ম্যানসেল, পুরাতন কসবার মাহমুদ হাসান বিপু, আনোয়ার হোসেন বিপুল, জাহিদ হোসেন মিলন, রবীন্দ্রনাথ সড়কের ফারুক ওরফে কালা ফারুক, পল্টু, এজাজ আহমেদ, টিপু সুলতান, রায়পাড়ার রিয়াজ, চঞ্চল ওরফে ট্যারা চঞ্চল, বাপ্পি, অম্বিকা বসু লেনের মোস্তফা ওরফে ট্যারা মোস্তফা, সিটি কলেজপাড়ার নাহিদ, সাদ্দাম, বেজপাড়ার রোহান, শহরতলীর মুড়লি এলাকার মাহমুদ হাসান লাইফ, উপশহরের সাগর, বালিয়াডাঙ্গার রবিউল ইসলাম, বাদশা মিয়া, ভাতুড়িয়ার শফিয়ার রহমান, আজাদ, নূরপুরের মো. সাগর খাঁ, চাঁচড়ার সোহান, হামিদপুরের সুজন ওরফে ট্যারা সুজন, বিরামপুরের শাহাজান আলী ওরফে কসাই শাহাজান, হাদিউজ্জামান ওরফে চিমা, জিরাটের রাজু আহমেদ, আন্দোলপোতার আলিমুজ্জামান মিলন, আলমনগরের টিপু সুলতান, ছোট হৈবতপুরের সিদ্দিকুর রহমান, তালবাড়িয়ার আসমত আলী চাকলাদার, ফিরোজ, শালিয়াটের ইমলাক, সুলতানপুরের দীপু ওরফে ডেঞ্জারাস দীপু, তফশিডাঙ্গার মামুন ও মিরাজুল, তালবাড়িয়ার তুহিন, চাঁদপাড়ার বাবুল, তালবাড়িয়ার হাসমত, ফিরোজ, চিমা, লেবুতলার লব ঘোষ, খোঁড়া খায়রুল, বেড়ে বাবু, উপশহরের টমাস ও সবুজ, কাজী জুয়েল, মিল্টন, চানপাড়ার মাসুদ, ঝুমঝুমপুরের বাইজিদ, বারান্দীপাড়ার আরিফ, ছোট বালিয়াডাঙ্গার সোহেল, কায়েদখালীর আনোয়ার, শহরের ধানপট্টি এলাকার সোহাগ, ঘোপের সাঈদ, ইছালীর মাজাহারুল ইসলাম খোকা, কাশিমপুরের সোহেল, সাতমাইল শ্যামনগরের প্রিন্স, বারান্দীপাড়ার জাকির ও নান্নুর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এক বা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র।
এ বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতিগত কারণে দেশজুড়ে পুলিশি কার্যক্রমে স্থবিরতা ছিল। পুলিশ সদস্যদের মনোবলেরও ঘাটতি ছিল। ইতিমধ্যে আমরা সেটা কাটিয়ে উঠেছি। পূর্ণোদ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখনকার ফোকাস অল্প সময়ের মধ্যে এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার।