স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর জেলায় শতাধিক অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে। অবৈধ ইটভাটায় ফসলি জমি ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ইটভাটা চালু রেখেছে মালিকরা। এজন্য তাদের আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭টি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঘুষ গ্রহণের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের তথ্যমতে, যশোর জেলায় মোট ১৪৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি বৈধ ইটভাটা। অবৈধ ১১৬টি ইটভাটার মধ্যে ৮টি ভেঙে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। জরিমানা করা হয়েছে আরও ৯টির। জেলার অবৈধ ইটভাটার তালিকায় যশোর সদরে ২৭টি হলো- বস ব্রিকস, সাহা ব্রিকস, স্মার্ট ব্রিকস, সিটি ব্রিকস-২, ক্রাউন ব্রিকস, ভৈরব ব্রিকস, ইমন ব্রিকস, নোকিয়া ব্রিকস, সহিদুল ব্রিকস, এমবিবিআই ব্রিকস, জুবলী ব্রিকস, প্রাইম ব্রিকস, টু-স্টার ব্রিকস, তোতা ব্রিকস, ফিরোজ ব্রিক্স, সোনা ব্রিকস, ডলার ব্রিক্স, মেসার্স মিকুল ব্রিক্স-২, নিউ সনি ব্রিক্স, মেসার্স ফাইন ব্রিকস, মেসার্স সুপার ব্রিকস, মেসার্স মিকুল ব্রিকস-১, মেসার্স প্রাইম-২ ব্রিকস, মেসার্স ইউনিক ব্রিকস, মেসার্স আসলাম ব্রিকস, মেসার্স দফাদার ব্রিকস ও নাটুয়াপাড়ার মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস। মণিরামপুর উপজেলার ২৭টি হলো-স্টার ব্রিকস, দিপ্র ব্রিকস-২, দিপ্র ব্রিকস-১, নিউ ব্রিকস, মুক্তা ব্রিকস, তারা ব্রিকস, ঢালী ব্রিকস, সততা ব্রিকস, মেসার্স নিউ সোনা ব্রিকস, নিউ সততা ব্রিকস, সোহাগ ব্রিকস-১ ও সোহাগ ব্রিকস-২, পদ্মা ব্রিকস, মেসার্স মুরাদ ব্রিকস, গাজী ব্রিকস, ইসলাম ব্রিকস, সিদ্দিকিয়া ব্রিকস, সান ব্রিকস, সরদার ব্রিকস, গোল্ড ব্রিকস, মেসার্স বন্ড ব্রিকস, নিউ বোল্ড ব্রিকস, মেসার্স শরীফ ব্রিকস, মেসার্স মুন ব্রিকস, মেসার্স আর এম ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, কিং ব্রিক্স।
শার্শা উপজেলার ২০টি অবৈধ ইটভাটা হলো- এএসবি ব্রিকস, মুকুল ব্রিকস, এমআর ব্রিকস, সততা ব্রিকস, সাফা ব্রিকস, মেসার্স এআর ব্রিকস, জয়েন্ট রিক্স, মেসার্স অর্ণব ব্রিক্স, মেসার্স জাহাঙ্গীর এন্ড আরিদ আরিয়ান ব্রিক্স, মেসার্স এস টি ব্রিক্স, মেসার্স মিজান ব্রিক্স, মেসার্স জননী রিক্স, মেসার্স মুন্নি ব্রিক্স, মেসার্স নিউ ব্রিক্স, মেসার্স মাহিব ব্রিক্স, মেসার্স হিরা ব্রিক্স, মেসার্স এআর ব্রিক্স, গোল্ড ব্রিকস-১, নাইচ ব্রিকস, মেসার্স জাহাঙ্গীর ব্রিক্স।
ঝিকরগাছায় ১১টি অবৈধ ইটভাটা হলো- মেসার্স বিশ্বাস ব্রিক্স, মেসার্স বিশ্বাস রিকস মেসার্স নাভারণ ব্রিকস, গোল্ড ব্রিকস, বিশ্বাস ব্রিকস, রায়পটন হাজিরবাগের বিশ্বাস ব্রিক্স, এমএইচ ব্রিকস, মেসার্স মেহেদী ব্রিকস, মেসার্স হিরা ব্রিক্স, সুফিয়া ব্রিকস, মেসার্স মজনু ব্রিকস। বাঘারপাড়ায় ১০ টি অবৈধ ইটভাটা হলো- সিটি ব্রিক-১, রেজা ব্রিকস, আরিফ ব্রিকস, লায়ন ব্রিকস-২, মেসার্স নিউ ফাইভ স্টার ব্রিকস-১, নিউ ফাইভ স্টার ব্রিকস-২, ইসলাম শাহ (হিনো) ব্রিক্স, শেখ ব্রিক্স, মেসার্স বিশ্বাস ব্রিকস, মেসার্স নিউ শেখ ব্রিক্স (লঙ্কর)।
অভয়নগরে ৯ টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে রয়েছে, মেসার্স মুন টালী ব্রিকস, রুপা ব্রিকস, এসএ ব্রিকস, হিরক ব্রিকস, সোনালী ব্রিকস ম্যানু:, মেসার্স রানা ব্রিক্স, আশা ব্রিকস, নিউ সোনালী ব্রিকস, রহমান ব্রিকস। কেশবপুরের ৬টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে রয়েছে, রয়েল ব্রিকস, মেসার্স প্রাণ ব্রিকস, এসএস ব্রিকস, মেসার্স রোমান ব্রিক্স, রিপন ব্রিক্স, বিএসবি ব্রিক্স। চৌগায় ৬ টি অবৈধ ইটভাটা হলো- এমডব্লিউইউ ব্রিকস, ওয়াজিউল্লাহ ব্রিকস, ফারজানা ব্রিকস, তানজিলা অটো ব্রিকস, আরকে ব্রিকস, এইচএম ব্রিকস।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ ভাটার কারণে ফসলি জমি ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে। স্থানীয় ও বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করছে। অদৃশ্য কারণে অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে ফের চালু হচ্ছে।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিক বলেন, অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে ঘুষের টাকা দিলে অভিযান হবে না। টাকা অফিসে পৌঁছে দিতে হবে। অনেকেই টাকা দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মো. এমদাদুল হক বলেন, জেলায় ১১৬টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ইতোমধ্যে দুইদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৭টি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৮টি ভাটা ভেঙে দেয়া হয়েছে। আর ৯টি ভাটা আংশিক ভেঙে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কারা কোন ভাটা থেকে ঘুষ আদায় করছে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।