বাংলার ভোর প্রতিবেদক
এবার শহীদ পরিবারের সন্তানের বসতঘর ভেঙে কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর সদরের হামিদপুর পশ্চিমপাড়ায় আসাদুজ্জামানের বাড়িঘরে এস্কেভেটর দিয়ে ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হামলার সময় দেড় থেকে দুইশ’ লোক সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে হামলা ও লুটপাট চালায়। বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান তার সন্তান ও স্বজনরা এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন তার বেয়াই নুরুল ইসলামের পক্ষে জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে এ হামলা চালান। ওই সময় নগদ টাকা, সোনার গহনা, গরু-ছাগল, ধান, গমসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য দেননি। বক্তব্য জানার জন্য তার বাসায় প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করলেও এ বিষয়ে তিনি একটি কথাও বলেননি।
আসাদুজ্জামানের ছোট ছেলে এ বি এম জাফরির স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার বলেন, দুপুর একটার দিকে হঠাৎ করে ২০-৩০ জন সশস্ত্র অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে। ওই সময় আমার স্বামী ও ভাসুর আফরাউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুরে অংশ নেয়। দুপুরের রান্না সম্পূর্ণ হলেও আমরা কেউই খেতে পারিনি। ঘরবাড়ি তছনছ করে দেওয়ায় রাতে শিশু সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো তাও অজানা।
এবিএম জাফরি বলেন, দুপুরে বাড়িতে কাজ করছিলাম। খালি গায়ে ওই সময় দেড় দুইশ’ সন্ত্রাসী শাটার গান, হকিস্টিক, লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। বাড়িতে এস্কেভেটর লাগিয়ে আটটি বসতঘর, দুইটি রান্নাঘর, তিনটি ফলদগাছ ধ্বংস করে। আমরা ভাঙচুর চালিয়ে একটি জমি কেনার জন্য বাড়িতে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা, মা ও ভাবি ও স্ত্রীর ৩০ ভরি সোনার গহনা, তিনটি গরু, ছয়টি ছাগল, প্রায় ৬০ টন ধান ও গম সাত-আটটি ট্রাক্টরের টলিতে করে নিয়ে যায়।
তিনি জানান সন্ত্রাসীরা ১৫-১৬ টি মাইক্রোবাস সাত আটটি ট্রাক্টরের টলি দুইটি জিপ, প্রাইভেটকার ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে হামলা চালায়।
আসাদুজ্জামানের মেজো ছেলে আফরুজ্জামান বলেন, ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম না। খবর পেয়ে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখছি। তারা আমার ছোট ভাইসহ বাড়িতে থাকা কয়েকজনকে মারধরও করেছে। আমি শুনেছি শহিদুল ইসলাম মিলন ওই সময় রাস্তায় গাড়িতে বসে ছিলেন। তারই নির্দেশনায় এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে যখন পুলিশ আসে তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু এস্কেভেটর ও একটি ট্রাক্টরের টলি ঘটনাস্থলে রয়েছে । শুনেছি পুলিশ এস্কেভেটর চালককে আটক করেছে।
বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান বলেন, শহিদুল ইসলাম মিলন আমার বাল্যবন্ধু। সম্প্রতি এই জায়গার সাবেক মালিক নুরুল ইসলাম তার বেয়াই হয়েছেন। নুরুল ইসলামের এই জায়গা শিল্প ব্যাংকে মর্টগেজ ছিল। ১৯৯২ সালে ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে আমরা এই জমিটি ক্রয় করি। সেই থেকে এই জমি ঘরবাড়ি ভোগ দখল করে আসছি। গতবছর শহিদুল ইসলাম মিলন এই জমি দখলের জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসে। তাদের মারপিটে আমার সন্তান আহত হয়। এবার গ্রামবাসীর হাওয়ায় সন্ত্রাসীসহ তিনি পালিয়ে যান। এ বিষয়ে আমরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম।
আসাদুজ্জামান বলেন, আমার বাবা শহীদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে শহীদ হন। আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান। আমাদের উপর এই হামলার বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বাড়িতে যাওয়া হয়। তিনি এই প্রতিনিধি সহ কয়েকজন সাংবাদিককে প্রায় ২০ মিনিট বসিয়ে নানা গল্প করেন। কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। কথাচ্ছলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আমি গতকাল ঢাকায় গেছিলাম। আজ এসেছি। এই ঘটনার বিষয়ে আমি কোনও বক্তব্য দেব না। তোমাদের যা খুশি তাই লিখতে পারো।
যোগাযোগ করা হলে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ছিলাম। তারা কাউকেই পায়নি। খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।