বাংলার ভোর প্রতিবেদক
অব্যাহত তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোরের প্রাণ-প্রকৃতি। দিন যত গড়াচ্ছে সূর্যের দাপট তত বাড়ছে। সেই সাথে জনজীবনে নেমে আসছে চরম অস্বস্তি। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে মানুষ। গ্রাম থেকে শহর, জেলার সর্বত্র হাসফাঁস অবস্থা। গরমে সব থেকে বেশি করুণ অবস্থায় রয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। রিকশাচালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে দিন আনা দিন খাওয়া প্রতিটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে এর থেকে পরিত্রাণের কোন সম্ভাবনা দেখছে না স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
গত এক সপ্তাহে ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে আছে তাপমাত্রার পারদ। শনিবার যশোরে সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই যশোরে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার বিকেল ৩টার পর এই জেলায় সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার ৩৯ ডিগ্রির মধ্যে ছিলো। গত কয়েকদিন ধরেই বৈশাখের এই খরতাপে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে চৈত্রের শেষভাগেও খরতাপে একাধিক দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর মধ্যে ২৮ মার্চ তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওই সময় টানা তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড করা হয়।
অব্যাহত শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাসে শরীর যেন ঝলসে যাচ্ছে। যাত্রাপথে ছাতা মাথায় দিয়ে তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। স্বস্তি পেতে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ হাতে মুখে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউবা শরবত, আখের রস, স্যালাইন পানিতে শরীর শীতল করার চেষ্টা করছেন।
শহরের মুজিব সড়কে পেয়ারা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। পেয়ারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। একদিকে ঝলসানো রোদ আর পিচের তাপের আঁচে মুখ পুড়ে যাচ্ছে। কি আর করা, কাঁচা মাল বিক্রি না করলে পঁচে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বেঁচাকেনা করছি। পেটও তো চালানো লাগবে।’
যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জিহাদ আলী বলেন, প্রচণ্ড গরমে গায়ে যেন আগুনের ধাক্কা লাগছে। একটু রিকশা চালালেই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। গরমে মাথা ঘুরে উঠছে।
রিকশা চালক শাহজাহান বলেন, গরমে সামান্য সময় রিকশা চালিয়ে কিছুক্ষণ জিরুতি (বিশ্রাম নেয়া) না পারলি আর কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘দুই তিনডে ভাড়া মারার পর ছাওয়ায় বসে কিছু না খেয়ে আর ভাড়া মারার ইচ্ছা হয় না’।
যশোর রেলবাজারের সবজি বিক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ঠাঁ ঠাঁ রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে বের হচ্ছে গরম হাওয়া। তার পাশে ছাতির তলায় বসেও বাঁচা যাচ্ছে না। খরিদ্দাররা ভোরের দিকে এসে সামান্য কেনাকাটা করে চলে যাচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘বাজারে সবজি কম, দামও বেশি। তারওপর খরিদ্দারও কম। কি যে যন্ত্রণায় আছি’।
এরূপ পরিস্থিতিতে বাইরে সাবধানতার সাথে চলাচলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল। তা না হলে পানি শূন্যতা থেকে জন্ডিস ও ডায়রিয়া হওয়ার আশংকার কথা বলেছেন তিনি। এমনকি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে এই গরমে-বলেন ডাক্তার রাসেল।
তিনি বলেন, গরমের তীব্রতায় বিশেষ কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে ঘন ঘন পানি খেতে হবে। একটা নিয়মিত বিরতিতে পানি খেলে পানি শূন্যতা থেকে থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডায়রিয়া এবং জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে ভাজাপোড়া বিশেষ করে তেল জাতীয় খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক।