স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর শহরের দড়াটানা ব্রীজের উপরে ভুট্টা পুড়িয়ে বিক্রি করেন খাদিজা খাতুন। ভৈরব নদের উত্তাল হিমেল বাতাসে প্রতিদিনকার মত সোমবার বিকেলেও বসেছিলেন তিনি। সন্ধ্যা নামার আগে ঠান্ডা নিবারণ করতে সোয়েটার পরে নিচ্ছেন। পাশে রেখেছেন পুরাতন জীর্ণ একটা চাদর। ক্রমাগত শহরে শীত বাড়ছে। কমতে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রাও। খাদিজা খাতুনের মত অনেকেই প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে গরম কাপড়ের জন্য। শুধু খাদিজা খাতুন নয়, শহরের রিকসা চালক রহিম উদ্দীনও জজকোর্ট মোড়ের বটতলায় রিকসা নিয়ে অপেক্ষা করেন যাত্রীর জন্য। সন্ধ্যা নামার পর শীতের মৌসুমে রিকসা চালাতে বিপাকে পড়তে হয় তার।
শুধু শহর নয় গ্রামেরও হাজার হাজার খাদিজা, রহিম উদ্দীন শীতের শুরুতে অপেক্ষায় থাকে গরম কাপড়ের। শীতের মৌসুমে দুই একটা কম্বল পেয়ে থাকেন তারা। কিন্তু এ বছরের শীতকাল তাদের জন্য ব্যতিক্রম। সরকারি ভাবে কম্বল বরাদ্দ পাইনি অনেকেই। কবে মিললে একটা কম্বল সেই আশায় দিন পার করছেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর যশোর জেলার জন্য কম্বল বরাদ্দ এসেছে ১০ হাজার পিস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছেন ৬১ লাখ টাকা। বরাদ্দকৃত কম্বল এবং টাকা জনসংখ্যার অধিক্যের ভিত্তিতে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে জেলার ৮ টি উপজেলাতে। সরকারিভাবে কম্বল বিতরণও করা হয়েছে। গতবছর এই জেলাতে কম্বল এসেছিলো প্রায় ৬৮ হাজার পিস। তবে কোনো নগদ টাকা বরাদ্দ ছিল না।
জানা গেছে, এ জেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষাধিক। এদের মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষ পরিবার রয়েছে। দুস্থ পরিবারের সংখ্যা লক্ষাধিক। সরকারি সুবিধা মূলত দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দ থাকে। সেই হিসাবে লক্ষাধিক দুস্থ পরিবারের বিপরীতে কম্বল বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১০ হাজার পিস। দুর্যোগ ব্যবস্থা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ৬১ লাখ টাকা শীতবস্ত্র কেনার জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়েছে উপজেলা ও পৌরসভাগুলোতে। সেই ভাগের হিসাবে অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা পেয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১১ লাখ টাকা। এছাড়া যশোর সদর, কেশবপুর, মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও শার্শা উপজেলার জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩৬ লাখ টাকা।
রিকসা চালক ইসরাফিল হোসেন বলেন, এবছর এখনও কোনো কম্বল পাইনি। অন্যবার এমন সময় রাতের বেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি অফিসের লোকেরা কম্বল বিতরণ করে। এবছর খুব কম কম্বল বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। একটা মোড়ে বা এলাকায় ২০ জনের কম্বল প্রয়োজন পড়লে দেখা যাচ্ছে সেখানে ৫ টা কম্বল দিচ্ছেন। আলাউদ্দীন মোড়ল বলেন, এ বছর নেতারাএ কম্বল দিচ্ছে না। ভোটের সময় হলে তো যে সে কম্বল দিয়ে বেড়ায়। ভোটেরও খবর নেই, কম্বলও দিচ্ছে না।
যশোর জেলার ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম বাংলার ভোরকে বলেন, বরাদ্দকৃত ১০ হাজার কম্বল ও নগদ টাকা উপজেলা ও পৌরসভার মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এ বছর কম্বল কম পেলেও শীত বস্ত্র কেনার জন্য নগদ টাকা বরাদ্দ এসেছে। যে উপজেলাতে জনসংখ্যা বেশি সেখানে ২৭শ’ পিস কম্বল আর জনসংখ্যা কম থাকা উপজেলায় ৯শ’ পিস কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে আরও কম্বল ও নগদ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শীতে জেলার দুস্থ মানুষদের যেন বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে না হয় তার জন্য পৌরসভা ও জেলা পরিষদও ত্রাণ ও পূর্ণবাসন দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।