বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে যশোরে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের ৭ম পর্যায়ের প্রকল্পের জনবল রাজস্বকরণ ও আউটসোসিং বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়েছে। রবিবার প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের জেলা ফিল্ড অফিসার মাওলানা সোলাইমান হোসেন, ফিল্ড সুপার ভাইজার মাসুম বিল্লাল, মাওলানা শাহজান, মাওলানা আশিকুর রহমান, মডেল কেয়ারটেকার আব্দুর রহমান, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আদম আলী, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাসুদুজ্জামান, শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।
শিক্ষকরা এ সময় জানান, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ৭ম পর্যায় (৩১.১২.২.২৪ খ্রি.) পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতা ও সুনামের সাথে সারাদেশব্যাপী ৭৩ হাজার ৭৬৮ টি শিক্ষা কেন্দ্র ও ২ হাজার ৫০ টি রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে সমাপ্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সারা দেশের মসজিদ কাঠামো ব্যবহার করে দারিদ্র সুবিধা বঞ্চিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদেরকে বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধ, কিশোর কিশোরী ও বয়স্কদের পবিত্র কুরআন শিক্ষা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষাদান করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম ওলামা ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার নারী ও পুরুষের দারিদ্রতা দূরিকরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি মানবিক ও নৈতিকতার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরী করা, সরকাররের উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে জনগণকে ধারণা প্রদান ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্তকরণে এ প্রকল্পটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতার শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ন প্রকল্প হিসাবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্প নিয়োজিত জনবল অত্যন্ত দক্ষতা, আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধ, যৌতুক ও বাল্য বিবাহরোধ, ইভটিজিং, যৌন নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার, মাদক ও চোরা চালান রোধসহ জন সাধারনের ইতিবাচক মনোভাব তৈরীতে ইমামদের মাধ্যমে মসজিদের জুম্মার খুৎবায় আলোচনা, সরকারের উন্ননমূলক কর্মকান্ডে আলেম ওলামাদের অংশগ্রহণ, কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের জানাযা, কাফন দাফন ইত্যাদী গুরুত্বপূর্ন কাজ সম্পাদন করে আসছে। প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০০০ সাল থেকে রাজস্বখাতে আওতাভুক্ত হয়েছে। প্রকল্পের ৩য় ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ের জনবল দীর্ঘদিন কাজ করার পরেও তাদেরকে রাজস্ব খাতের আওতাভূক্ত করা হয়নি। চাকুরী জীবনে ১৯৯৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পরবর্তীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন জনবলের পদোন্নতিও হয়নি। প্রকল্পের ৭টি পর্যায় সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হওয়ার পরেও প্রকল্পের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ের জনবল রাজস্বখাত ভূক্তকরা হয়নি। জনগুরুত্বপূর্ন প্রকল্পটি দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ চলমান থাকলেও প্রকল্পে কর্মরত জনবলের মূল বেতন বছর বছর কখনো বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকারের প্রতিটি দপ্তরের কর্মচারীদের মত সমহারে কাজ করেও কেবলমাত্র প্রকল্পে কর্মরত থাকার কারণে বেতন বৈষম্যের স্বীকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল অন্যত্র চাকুরীর বয়স হারিয়ে প্রকল্প শেষে চাকুরী হারানোর ভয়ে চরম হতাশায় জীবন যাপন করছি। এ ছাড়া প্রকল্পে কর্মরত জনবলের স্বাভাবিকভাবে ইনক্রিমেন্ট, টাইম স্কেল, পদোন্নতি না থাকায় সামাজিক মর্যাদাহানী সহ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অর্থ কষ্টে আছি। প্রকল্পের বঞ্চিত ও হতাশাগ্রস্থ অবশিষ্ট জনবলকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত করা হলে তারা মাঠ পর্যায়ে সরকারের সকল পলিসি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভুমিতা পালন করবে।
তারা আরও জানান, বর্তমানে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৮ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ৩২ বছরের এই শিক্ষামূলক প্রকল্পটিকে আউট সোর্সিং করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। ৯শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি আউট সোর্সিং করা হয়নি অথচ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে পবিত্র কুরআন শিক্ষার প্রকল্পকে আউট সোর্সিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কুরআন শিক্ষার প্রকল্পটি ধ্বংস করার পায়তারা করা হচ্ছে। এ রকম হলে আলেম-ওলামাদের মাধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা হবে। দেশে অশান্তি সৃষ্টি হবে। জনবলকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর, কর্মী-কেয়ারটেকারদের স্কেলভিত্তিক বেতন ভাতা প্রদান ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করার দাবি করেন।