বিবি প্রতিবেদক
যশোর সদরে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের গ্রহীতারা এবার লোড ক্যাপাসিটি বিড়ম্বনায় পড়েছেন। লোড ক্যাপাসিটি না বাড়ালে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক সংযোগ। আর এ সমস্যা নিয়ে ওজেপাডিকো যশোর অফিসে ফোন করলে বা স্বশরীরে গেলে শোনানো হচ্ছে এক আজগুবি গল্প। যার নাম লোড ক্যাপাসিটি বাড়ানোর। প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক গ্রাহ এ সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিদ্যুৎ অফিসে। আর সেখানে গেলে ফোন কলে জানানো হচ্ছে লোড ক্যাপাসিটি বাড়ানোর জন্য। এ জন্য গ্রাহকদের সরকারি ৪০৩ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হচ্ছে। আর কিলোওয়াট প্রতি মাসে গ্রাহকদের আবাসিকে গুণতে হবে ৩৫ টাকা করে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের দিতে হবে ৭৫ টাকা। এতে ক্ষুব্ধ মত প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা।
গ্রহীতারা বলছেন, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে এমনিতেই বিল অনেক বেশি। একজন গ্রাহক ইউনিট প্রতি বিল দিয়ে থাকে। এখানে আবারও সরকারি ফি দিয়ে আবেদনের পাশাপাশি প্রতিমাসে গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে। যা তাদেরকে আর্থিকভাবে চাপে ফেলবে। তবে ওজোপাডিকো’র কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহকরা অনুমোদনহীনভাবে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, যে কারণে অনুমোদন নিতে হবে তাদেরকে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যশোরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ ও ২-এর আওতায় ২০২০ সালে ৪৬ হাজার ৫০৯ জন গ্রাহকের পুরনো মিটার বদলে দেয়া হয় স্মার্ট মিটার। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি টাকা। এর জন্য পুরনো গ্রাহকদের বাড়তি কোন খরচ না লাগলেও মিটার ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে আদায় করছে ওজোপাডিকো। এবার ডিমান্ড চার্জের পাশাপাশি কিলোওয়াট বাড়াতে হচ্ছে গ্রাহকদের। প্রতি কিলোওয়াটর জন্য মাসে গ্রাহকদের দিতে হবে ৩৫ টাকা করে।
ওজোপাডিকো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, তাদের অধীনে মোট গ্রাহক রয়েছে ৫০ হাজার। এর মধ্যে ২৩ হাজার গ্রাহক স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারে যুক্ত রয়েছেন। তাদের সবাইকে মিটারের কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। কিলোওয়াট প্রতি আবাসিকে গ্রাহকদের মাসে দিতে হবে ৩৫ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ৭৫ টাকা।
ওজোপাডিকো ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মাহমুদ প্রধান জানান, তাদের অধীন ৫৮ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। যার মধ্যে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার গ্রাহক আছেন ২৩ হাজার ৫শ। আমার এসব মিটারের গ্রাহকদের কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য চিঠি দিচ্ছি। যদিও বেশি কিলোওয়াট হলে মিটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
শহরের সার্কিট হাউজের সামনের ৩৯ মুজিব সড়কের বাসিন্দা এস শামছুদ্দীন গত কয়েকদিন দরে ভুগগছেন অটোমেটিক বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায়। গত সোমবার রাতে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ একাধিকবার বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ফোন করেন ওজোপাডিকো যমোর অফিসে। সেখান থেকে জানানো হয় লাইনে কোন সমস্যা নেই। আপনার লোড বেশি তাই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোড বাড়াতে হবে। এ সমস্যা নিয়ে স্বশরীরে বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও একই সুরে কথা বলা হয়। বলা হয় আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনার বৈদ্যুতিক পিলার থেকে মিটার পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই। লোড সমস্যা। লোড ক্যাপাসিটি বাড়ালে সব ঠিক হয়ে যাবে। এ সময় বিদ্যুতের একাধিক কর্মকর্তার সাথে ফোনে ও স্বশরীরে কথা বললে তারাও একই কথা বলেন। তাদেরকে যখন জানানো হয় এ মুহূর্তে মাত্র দু’টি কম্পিউটার আর দু’টি এলইডি লাইট জ¦লছে বাসায় তাহলে দুই কিলোওয়াট লোড কোথায় যাচ্ছে বলেন। এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। শুধু বলেন আপনার লোড বাড়াতে হবে।
শহরের স্মিথ রোডের অপর বাসিন্দা হারুণর রশিদ তুহিন বলেন, ত কয়েকদিন ধরে বাড়িতে রুম হিটার আর ইন্ডাকশন চুলা জ¦ালানোর সাথে সাথে মিটার থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিলে বিদ্যুৎ অফিসের লোক বলে লোড বাড়ান। এ যেন একসূরে গাথা কোন বীণার তার। তিনি বলেন প্রতি মিটারে কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য সরকারি ফি হিসেবে ৪০৩ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিমাসে মিটার প্রতি দিতে হবে ৩৫ টাকা ডিমান্ড চার্জ। যা আমাদের জীবনে আর্থিকভাবে চাপে ফেলবে।
যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, গ্রাহক বিদ্যুতের যে ইউনিট ব্যবহার করছে তার জন্য টাকা পরিশোধ করছে। ইউনিট প্রতি বেশি টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের অগোচরে। তাহলে আবারও কেন ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। আবার প্রতিমাসে গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জ হিসেবে কিলোওয়াট প্রতি আবাসিকে ৩৫ টাকা দিতে হবে। যা গ্রাহকদের জিম্মি করে জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এটা সরকারি ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজির ছাড়া আর কিছুই না।
ওজোপাডিকো যশোরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার জানান, গ্রাহকরা অনুমোদনহীনভাবে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। যে কারণে তাদেরকে কিলোওয়াট বাড়াতে হচ্ছে। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহকদের এই কিলোওয়াট বাড়াতে হবে।
শিরোনাম:
- উপশহর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত
- ‘বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে’
- যশোরে নতুন আঙ্গিকে ব্রাদার্স ফার্নিচার শো রুম উদ্বোধন
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস
- শীতে ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রির ধুম
- একটা সংস্কার কমিটি দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
- নিখোঁজের ৩ দিন পর কপোতাক্ষ নদে মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
- কৃষ্ণনগরে আরাফাত কোকো স্মৃতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন রতনপুর