বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের স্থানীয় বাজারগুলোতে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। সরকারি গুদামে ধান বিক্রি ঝামেলার হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের। ফলে শুরু থেকে এবার যশোরে আমন ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে দেড় মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও ধান কেনা সম্ভব হয়নি। এখনো ফাঁকা রয়েছে সরকারি খাদ্য গুদামগুলো।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর, শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে ও ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ধান কেনা চলছে। অভয়নগর উপজেলায় শুধু আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ধান কেনা চলছে। জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৩৭০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৭০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হচ্ছে। গুদামে ধানের নির্ধারিত দাম ১ হাজার ৩২০ টাকা মণ। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, শ্রম ও ব্যয় বেশি। এ জন্য কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকদের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় ও আবাদ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব আছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ৯ হাজার ৭১৯ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা জেলায় ১৫ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১৪ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল ৮০১ মেট্রিক টন। গত ১৭ নভেম্বর থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১৫ মার্চ আতপ চাল সংগ্রহ শেষ হবে। সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য ১০২ জন চালকলের মালিক ৮ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তবে আতপ চাল সরবরাহে কোনো চালকলের মালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা, আতপ চাল ৪৬ টাকা এবং ধান ৩৩ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে। ১৪ শতাংশের নিচের আদ্রতার ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে ২২ টন ৪০০ কেজি। ধান সংগ্রহের হার শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে এ সময়ে চাল সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৯১৯ দশমিক ১৬০ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারেন। ধান কেনার পর গুদাম থেকে কৃষককে ওজন মান মজুত সনদ দেওয়া হয়। কৃষক ওই সনদ ব্যাংকে তার নিজস্ব ১০ টাকার হিসাবে জমা দিয়ে ধান বিক্রির টাকা তোলেন।
মণিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক জয়লুল আবেদীন এবার চার বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করে ৮৮ মণের মতো ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭৩ মণ ধান তিনি ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৬০ টাকা মণ দরে বাড়ি থেকে বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়। তা ছাড়া পরিবহনের একটা খরচ আছে। সময়ও বেশি লাগে। বাড়ি থেকে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। কোনো খরচও নেই। দামও ভালো। এ জন্য গুদামে ধান বিক্রি করিনি।’
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেফাউর রহমান বলেন, যশোরে চিকন ধানের চাষ বেশি হয়। কিন্তু সরকারিভাবে কেনা হয় মোটা ধান। চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। তা ছাড়া খাদ্যগুদামগুলো কিছুটা দূরে হওয়ায় ধান পরিবহনে কৃষকের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, সময়ও বেশি লাগছে। এ জন্য খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে চাষিরা আগ্রহী হচ্ছেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহের সম্ভাবনা কম। তারা সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকেরা চাল সরবরাহ করছেন। এতে এখন পর্যন্ত ৩৪ শতাংশ চাল সংগৃহীত হয়েছে।