বাংলার ভোর প্রতিবেদক
শঙ্কা আর উৎকন্ঠা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে সদর উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের এই নির্বাচনে উপজেলাতে প্রথমবারের মতো সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট প্রদান করছেন ভোটাররা। তবে আশানুরূপ ভোটারের উপস্থিতি হয়নি এ ধাপের ভোট গ্রহণেও। কেন্দ্রগুলোতে ভোটার লাইন চোখে পড়েনি। এমনকি কিছুক্ষণ পরপর ২/১ জন করে ভোটারকে ভোট দিতে আসতে দেখা গেছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেরই একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে, ভোটাররা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার না জানায় ভোট দিতে দেরি করেছেন। অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ মেশিনে না মেলার কারণে ভোট দিতে দেরি হয়েছে। ফলে ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা।
নির্বাচন কমিশন ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি পদের বিপরীতে লড়েন ১৬ প্রার্থী। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়েছেন তারা। নিজ দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে নামেন ৮ জন। এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন।
সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও শহরের কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা উপস্থিতি বেড়েছে। সেটিও আশানুরূপ নয়। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। ইভিএমে ভোট দিতে এসে অনেকেই ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। শহরের মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ ভোট দিতে আসেন রুমা রায়। কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে আঙুলের ছাপ না মেলায় বিপাকে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ অনেকক্ষণ থেকে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারিনি। এখন ন্যাশনাল আইডি কার্ড আনতে যাচ্ছি।’
বেজপাড়া থেকে আসা গোবিন্দ নাথ নামে আরেক ভোটার বলেন, ‘মেশিনে তো খুব সমস্যা হচ্ছে, কাজ করছে না। কী সমস্যা হচ্ছে, জানতে চাইলে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘এই কেন্দ্রের সবাই নারী ভোটার। তারা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। মাছ কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করার কারণে তাদের অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছে না। তাই বারবার মেশিনে চাপ দিতে হচ্ছে। এ কারণে ভোটগ্রহণ বিলম্ব হচ্ছে।
বেলা ১২ টার দিকে যশোর জিলা স্কুলে গিয়ে কোন ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ মাঠে বেঞ্চে বসে সময় কাটাচ্ছেন দেখা যায়। মাঝে মধ্যে ২-১ জন আসছেন তারা ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মখলেচুর রহমান বলেন, ‘জিলা স্কুলের পুরুষ কেন্দ্রে দুই হাজার ৭৯০ ভোটার। বেলা ১২ টা পর্যন্ত ৩৭০ ভোটার ভোট প্রদান করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোটারের উপস্থিতি কম। অনেকের হাতের আঙ্গুলের ছাপ না মেলাতে দেরি হচ্ছে। তবে সবাই ভোট দিয়েই যাচ্ছেন।’
সদরের শীলা রায় চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রিজাইডিং অফিসার এসএম আশিক আজমেদ জানান, ‘এই কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ৩৯৭। ভোট গ্রহণের প্রথম দুই ঘন্টাতে ২১৩ ভোট পড়ে। কিছুক্ষণ লোডশেডিং হলে একটি কক্ষে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আধা ঘন্টা পর অন্য মেশিন দিয়ে আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণে ইভিএমের সমস্যা হলেও সেটা তেমনভাবে বোঝা যাচ্ছে না।
যশোর শহরতলীর চাঁচড়া ভাতুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে সকালে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। গত দু’দিন আগের একটি গোলযোগের ঘটনার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার দেবপ্রসাদ হালদার জানান, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক হাজার ৭৯২ জন ও মহিলা ভোটার এক হাজার ৭৩৬। সকাল আটটা থেকে ভোট শুরু হওয়ার পর দুপুর বারোটা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে মোট ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ২৮৫টি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, ভাতুড়িয়া স্কুল ভোট কেন্দ্রের মাঠে গত দু’দিন আগে কিশোর গ্যাংয়ের দু’পক্ষের মাঝে গোলযোগ হয়। এ ঘটনায় নয়জন গুরুতর আহত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ জাতীয় কারণে সকালে কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
এদিকে বেলা ১১ টার দিকে শহরের মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। এ সময় তার সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। কোথাও অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বয়স্কদের আঙুলের রেখা মুছে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর অনেকের ভোট হয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স্ক ভোটারদের ভোট নিশ্চিতের চেষ্টা করার ভোট গ্রহণ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।