‘করোনারি কেয়ার ইউনিটের তিনতলা পর্যন্ত লিফটের সুবিধা রয়েছে। শুধুমাত্র লিফটের অভাবে চতুর্থতলায় নতুন ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না’
– ডা. হারুন অর রশিদ, তত্ত্বাবধায়ক হাসপাতাল
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
উদ্বোধনের সাত মাসেও চালু হয়নি যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধুমাত্র লিফটের অভাবে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সব যন্ত্রপাতি থাকার পরও অতিব জরুরি এ ইউনিটটি মুমূর্ষু রোগীদের কোনো কাজে আসছে না।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ সালের নভেম্বরে হাসপাতালের পুরাতন মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ৫ শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়। করোনা মহামারির প্রকোপ কমলেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সাধারণ রোগীদেরও আইসিইউ সেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে রোগীর চাপের কারণে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের চতুর্থতলায় নতুন করে ১০ শয্যার আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হয়। গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ ইউনিটটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেখতে দেখতে সাত মাস পার হলেও সেটি আর চালু হয়নি। ফলে স্বল্প খরচে সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না যশোরবাসী।
মনিরামপুর রোহিতার নজরুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে যে আইসিইউ ইউনিট চালু আছে, সেখানে রোগী রাখার জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তখন করার কিছুই থাকে না। করোনারি কেয়ার ইউনিটের ওপর যে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে, সেটি দ্রুত চালু করলে আশপাশের জেলার মানুষও স্বল্প খরচে বিশেষায়িত এ সেবাটি পাবে।’
যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘করোনার সময় আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, আইসিইউ কতটা জরুরি। যশোরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালে কোনোরকম একটি আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন করা হলেও তার সেবা চালু ছিল না। পরবর্তীতে সরকার করোনারি কেয়ার ইউনিটের ওপরে নতুন আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্বোধনও করেন।’
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। যশোরে একজন বাসিন্দা হয়ে অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু আজও ইউনিটটি চালু হয়নি। এতে অসংখ্য মানুষ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এটি চালু করা হোক।’
যশোর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অনেক রোগী আইসিইউ সেবার অভাবে মারা যাচ্ছেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যশোরের বাইরে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অনেকে আবার পথিমধ্যেই মারা যাচ্ছেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটটি চালু হলে এই অবস্থার উত্তোরণ হতো।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, ‘করোনারি কেয়ার ইউনিটের তিনতলা পর্যন্ত লিফটের সুবিধা রয়েছে। শুধুমাত্র লিফটের অভাবে চতুর্থ তলায় নতুন ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সংকট কেটে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ ইউনিটটি স্থাপন করা হয়েছে।