বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শহরের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস সড়কে দ্বিতীয়তলা ভবনটির মালিক জেলা প্রশাসন। অর্পিত সম্পত্তির ওই ভবনটি ১৩ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে ১৩শ’ ৩৩ টাকা মাসিক ভাড়ায় ইজারা নেয়া হয়। গত ১২ বছর ধরে ইজারা বাবদ মাসিক ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেনি দলটি। ইজারা নবায়নও হয়নি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ অফিসের ভাড়া বকেয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। এ নিয়ে সমালোচনা চলছে। তবে এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উদাসীনতাকেই দুষছেন নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, দল ক্ষমতায় থাকতে শীর্ষনেতারা নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল, দলীয় অফিসের দিকে নজর দিতে সময় পাননি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার জানান, জেলা রাজস্ব কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। ওই সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানা যায়, ২০১৩ সালে যশোর শহরের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস সড়কের (সাবেক চেম্বার অব কমার্স ভবন) পরিত্যক্ত এপি সম্পত্তির একটি ভবন ডিসিআর হিসেবে বন্দোবস্ত পেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। ওই বছরের ২৩ এপ্রিল জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভায় ৮০ নাম্বার বারান্দী মৌজার ১৭ নাম্বার এসএ খতিয়ানের ৯৫ দাগে গাড়িখানা রোডের পরিত্যক্ত ভবনটির দ্বিতীয়তলা মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করে জেলা আওয়ামী লীগের অনুকূলে অস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়। আবেদনের এক বছর আগেই দখলে যাওয়ায় ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে মাসিক ভাড়া ১ হাজার ৩শ’৩৩ টাকা করে প্রতিবছর জমা দিতে বলা হয়। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ডিসিআর বিধি অনুযায়ী অস্থায়ী বন্দোবস্ত হয় মাত্র এক বছরের। প্রতিবছর ডিসিআর কেটে নবায়ন করতে হয়। আর এক বছর ডিসিআর কেটে নবায়ন না করলে অটোমেটিক ওই ডিসিআর বাতিল হয়ে যায়। প্রথম বছর ভাড়া বাবদ টাকা জমা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আর ভাড়া দেয়া হয়নি সরকারি কোষাগারে। ১২ বছরে সরকারের পাওনা হয় ১ লাখ ৯১ হাজার ৯শ’৫২ টাকা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজস্ব বিভাগের কেউ যোগাযোগও করেননি। এক যুগ ধরে ওই ভবনটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে যান। এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন বলেন, ‘দলে আর আদর্শ নেই। এই দল করে দীর্ঘ ক্ষমতায় থেকে এই শহরে বাড়ি-ঘর করেছে। বড় বড় হোটেল করেছে কেউ কেউ। কর্মীদের করা হয়েছে অবমূল্যায়ন। যার ফলেই দল ও দলীয় কার্যালয়ের এই অবস্থা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন দলীয় কার্যালয়ের ভাড়া দেননি, এই দায়ভার সম্পূর্ণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের। তাদের উদাসীনের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি জানার পরে জেলা দপ্তর সম্পাদকের কাছে জানানো হয়েছে। দ্রুত ভাড়া দিয়ে যাতে অফিসটি হাতছাড়া না হয় সেই উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছি আমরা।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মজিবুদ্দৌলা সরদার কনক বলেন, আমাদের লিজ অনেক আগেই বাতিল হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ভাড়া দেয়া হয় না। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি আসে। সেই চিঠিতে ভবনটি আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হয়। ভাড়া পরিশোধ করে ভবনটি নতুন করে লিজ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আমরা আবেদন করবো।’