# দুইদিনে হামলার শিকার ওসিসহ ১০
# তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
৬ মে রাতে যশোরের চৌগাছা থানার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের মাকাপুর গ্রামে নিয়মিত মামলার আসামি ধরতে যান উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান মারুফ ও উত্তম কুমারের নেতৃত্বে টিম। সেখানে ধান লুটের মামলায় সিয়াম নামে এক আসামিকে গ্রেফতারও করেন। এ সময় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী পুলিশের কাজে বাধা দেয় এবং আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ওসি আনোয়ার হোসেন অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এরপর আসামিকে নিয়ে ফেরার পথে দুষ্কৃতিকারীরা ফের ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের হামলা করে। এতে ওসিসহ ৭জন আহত হন। তাদের মধ্যে এএসআই লাভলু গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে গত ২ মে যশোরের এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী প্রেমের টানে পালিয়ে যান ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জে। এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার (৫ মে) বিকেলে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসযোগে যশোর কোতোয়ালি থানার ৪ পুলিশ সদস্য ও মেয়ের বাবা ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামে যান। স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের সহযোগীতায় যশোরের পুলিশ সদস্যরা মেয়েটিকে উদ্ধারে গেলে স্থানীয়রা পুলিশের উপর হামলা করেন। এই ঘটনায় এক উপ পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে কালিগঞ্জ থানার ওসি তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এই দুটি ঘটনা নয়; চলতি বছরের পাঁচ মাসে যশোরে পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এক ওসিসহ ১১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও সড়কে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বিরূপ আচরণের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটানো হয়েছে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণে বা ‘মব’ তৈরি করে। তবে অভিযানে পুলিশের কৌশলগত দুর্বলতা নাকি অপরাধীদের বেপরোয়া আচরণের কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সদস্যরা মারপিটের শিকার হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। সম্প্রতি দুটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, পুলিশ সদস্যদের মারপিটের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে পুলিশের কোন দুর্বলতা ছিল কিনা। তবে সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে। তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। নিয়মিত থানায় যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি।’
জানা যায়, যশোরে প্রতিনিয়ত মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছে পুলিশ সদস্যরা। গত সোমবার ভিকটিম উদ্ধার ও মঙ্গলবার আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে থানার ওসিসহ অন্তত ১০জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অপরাধীদের হাতে পুলিশ সদস্যদের মারপিটের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ১ মার্চ সন্ধ্যায় যশোর শহরের দড়াটানায় ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে মোটরসাইকেল রাখতে নিষেধ করায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শরিফুল ইসলামকে ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দেন যশোর সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সবুজ হোসেন শাওন। এ ঘটনার পর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২০ মার্চ যশোরে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আটক এক কিশোরকে যশোর কোতয়ালী মডেল থানা চত্বরে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধরের চেষ্টা করে একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। এ সময় পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হন। শুধু এই চারটি ঘটনা নয়, সম্প্রতি পুলিশ সদস্যরা আসামি ধরতে কিংবা অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের অভিযানে কৌশলগত দুর্বলতা নাকি অপরাধীদের বেপরোয়া আচরণের কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মব তৈরি করে হামলাগুলো করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও মব তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। এই মব তৈরি করে শুধু পুলিশের ওপরেই হামলা হচ্ছে তা নয়, বরং কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষের ওপরও হামলা বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের মব তৈরি এবং হামলার ঘটনায় পুলিশের সদস্যদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবরুল হক সাবু বলেন, ‘এটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা, এটা কোন রাজনীতিক দল বা ব্যক্তির সমর্থনযোগ্য নয়। সমাজবিরোধী এসব অপরাধীকে কঠোর হস্তে দমন করা উচিত। বিএনপির কেউ যদি এ ধরণের কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও শান্তির কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আইন প্রয়োগে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। না হলে দেশে অরাজতকা বাড়তে থাকবে।’