বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জিলা স্কুল জামে মসজিদের খতিব আশরাফ আলী। চলতি বছরে হজে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন যশোর শহরের টিবি ক্লিনিক রোডস্থ স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে হজ এজেন্সির সাথে। প্রাক নিবন্ধন, যাবতীয় কাগজপত্রসহ এজেন্সির কথায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে পাঁচ লাখ ১০হাজার টাকা পরিশোধ করেন। হজ যাত্রা শুরুর কয়েকদিন আগে চূড়ান্ত কাগজপত্র না পাওয়ায় হজে যেতে পারেননি তিনি।
অভিযোগ, হজের পুরো টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এজেন্সির প্রতিনিধি মোয়াল্লিম আবু হুরায়ারা। নিয়ত করেও দালালের খপ্পরে পড়ে হজে যেতে না পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মসজিদের এই খতিব। তিনি বলেন, ‘আমাকে হজে পাঠানোর জন্য আবু হুরায়রার কাছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর আবু হুরায়রা আমার সঙ্গে নোমান নামের একজনকে পরিচয় করিয়ে জানান, হজের সবকিছু নোমান দেখবে। হঠাৎ একদিন ফোন করে নোমান বলেন, “আপনার হজ নিবন্ধনের জন্য হুরায়রা আমাকে মাত্র ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা না দিলে নিবন্ধন রিপ্লেসমেন্ট করা হবে।” তখন আমি বলেছি, আমি নিবন্ধন নম্বরসহ যেসব দলিল ডকুমেন্টস পেয়েছি, তা তো ৩ লাখ ৩০ হাজারের। আপনি, হুরায়রা আর আপনাদের প্রতিষ্ঠান আমার সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে জানিয়ে দিই। এরপর আমি নিজে হুরায়রার বাড়িতে গেছি। কিন্তু বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখেছি। এ বছর হজের নিয়ত করেও দালালের খপ্পরে পড়ে আমি বঞ্চিত হলাম।’
যশোর শহরতলী সুজুলপুর জামতলাতে অবস্থিত বাগে জান্নাত কারিমীয়া কওমী মাদরাসাতে দেড় দশক ধরে পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন ফরহাদ হোসাইন।
মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি হজ ও ওমরাতে লোক পাঠাতেন। চলতি বছর তিনি ওমরাতে লোক পাঠানোর জন্য আবু হুরায়ারার কাছে টাকা দিয়েছিলেন। উন্নতমানের বাসা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও গাইড খরচ দেয়ার নামে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা আবু হুরায়ারা।
ফরহাদ হোসাইন বলেন, ‘১২ জন ওমরার হাজীর জন্যর ফুল প্যাকেজের টাকা দেই। কিন্তু তিনি ১১ জনের ভিসা দেন। সৌদি আরবে যেয়ে সে আমাদের হোটেল ভাড়া, ফেরত টিকিট কোনটা দেয়নি। নিজের টাকা দিয়ে আমি হাজীদের দেশে এনেছি। হুরায়রা ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মেরে দিয়ে আত্মগোপনে। তাকে আমরা কোথাও পাচ্ছি না। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
আশরাফ আলী ও ফরহাদের মতো স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের প্রতারণার শিকার হয়েছেন যশোরের অর্ধশতাধিক হজ ও ওমরাহযাত্রী। ভুক্তভোগীরা যশোর কোতয়ালী থানা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও দিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিরাপদে হজ কিংবা ওমরাতে পাঠানোর নামে দেড় থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার চটকদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করেন। এসব হাজীদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন তিনি। এমনকি শহরের টিবি ক্লিনিকস্থ রোডে তার হজ এজেন্সীর অফিসও বন্ধ। শহরের খড়কিতে একটি বাসাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব হাজী হজে কিংবা ওমরাতে যাওয়ার জন্য আবু হুরায়রার কাছে টাকা দিয়েছিলেন; বন্ধ অফিস ও বাসাতে প্রতিনিয়ত আসছেন প্রতারণার শিকার হওয়া যাত্রীরা।
যশোর শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলাস্থ এলাকার হুমায়ন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওমরা যাওয়ার জন্য মোয়াল্লিম আবু হুরায়রার কাছে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এক মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওমরাতে যেতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে আমি উদ্ধগ্ন।’ আবু হুরায়রার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। তার যশোরের অফিস ছিলো শহরের টিবি ক্লিনিক রোডে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যেয়ে দেখা গেছে স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের কোন সাইনবোর্ড নেই। পাশেই একটি মুদি দোকানদার জানান, ‘কয়েক বছর ধরে এখানে আবু হুরায়রা নামে মোয়াল্লিম হজ ওমরার লোক দিয়ে যেত। অফিসও ছিলো। মাস খানিক উনি আসছেন না। ভবনের দেয়ালে সাইনবোর্ড ছিলো, সেটিও উধাও। যাদের টাকা মেরে পালিয়ে গেছে, তারা এখানে প্রতিনিয়ত এসে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।’
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ অভিযুক্তকে আটকে কাজ শুরু করেছে।’
এদিকে, প্রতারণার শিকার হওয়া যাত্রীরা প্রতারক মোয়াল্লিমকে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে এ ধরনের ব্যক্তিদের হজ কিংবা ওমরাতে লোক পাঠানোর লাইসেন্স না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।