বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বসন্তের শুরুতে একদল ইতিহাসপ্রেমীর পদচিহ্ন পড়ল যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভরত ভায়না গ্রামের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভরত রাজার দেউলে। জায়গাটি ভট্টরাজার দেউল নামেও পরিচিত। প্রায় দুই সহস্র বছরের এই স্থাপত্যকীর্তিটি আজও গুপ্ত ও পালযুগসহ বিভিন্ন সময়ের সাক্ষী হয়ে আছে। আজও দেখা মেলে মানুষের মূর্তিখচিত পোঁড়ামাটির ফলকের ভাঙ্গা টুকরা, অলঙ্কৃত ইট, খোলামকুচি ও মৃন্ময় তেলের প্রদীপসহ মোট বারোটি প্রত্নবস্তুর। এমন একটি হারানো সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস নির্মাণের উৎস ও উপাদান সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতে অভিযানে বের হন ইতিহাস ক্লাবের সদস্যরা। শুক্রবার সকালে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোরের ইতিহাস বিভাগের ইতিহাস ক্লাবের উদ্যোগে দিনব্যাপি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সফর ২০২৫ নামে এ ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়। ক্লাবটির ৫৪ জন সদস্য ও শিক্ষকসহ কলেজের চেতনায় চিরঞ্জীবের পাদদেশ থেকে একযোগে রওনা হন ভরত ভায়নার উদ্দেশ্যে।
শৈশব স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে কারো হাতে পেঁয়াজ, কারো হাতে রসুন, অথবা কারো হাতে মরিচ, মসুর ডাল, শুকনো কাঠ, হলুদ, আলুর দেখা মেলে। সবকিছু নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর পরই প্রাতরাশ সম্পন্ন করে চড়ুইভাতির প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এসময় কেউ কাটাকুটিতে ব্যস্ত, কেউ সেমিনারের আয়োজন, কেউ কেউ গিটারে তোলে সুর ও সঙ্গীতের ঝংকার এবং কেউ কেউ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গ্রামীণ শৈশব জীবনের নানা ক্রীড়া পর্ব শেষে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন সকলে। পরপরই একযোগে নিদর্শনসমূহ পরিভ্রমণে বের হয়, ফটোসেশন চলে। পড়ন্ত বিকালে মূল মনুমেন্টের বহিরাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভরত রাজার দেউল: প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওপেন-এয়ার সেমিনার। যেখানে মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিমন বিশ্বাস। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শামীমা আখতার, আলোচক ছিলেন ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ইতিহাস ক্লাবের উপদেষ্টা শাহ্জাহান কবীর, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচক হিসেবে ছিলেন অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম খান এবং সভাপতিত্ব করেন ইতিহাস ক্লাবের সভাপতি ও অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়া ইমন। মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুন্নবীর সঞ্চালনায় এবং হামিদা হিমুর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইতিহাস ক্লাবের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়।
সেমিনার শেষে দ্বিতীয় পর্ব শেষে শুরু হয় আরেকটি মজাদার আয়োজন, বারোয়ারি বিতর্ক। সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে, আলো আঁধারের মিতালি ঘিরে ধরেছে সেসময় ভরত রাজার দেউলের শীর্ষ দেশে সবাই গোল হয়ে বসে প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহ্য ও পরিবেশ বিষয়ক বারোয়ারি বিতর্ক উপভোগ করেন। বিতর্কের তিনটি বিষয়— এমন যদি হত…, হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি… এবং তুমি যাবে ভাই…যাবে মোর সাথে..। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ ১ম ও শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হন অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী স্বর্নালী রাজবংশী, দ্বিতীয় হন একই বর্ষের শিক্ষার্থী মঞ্জিল আহমেদ এবং তৃতীয় হন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিমন বিশ্বাস। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সকলকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও র্যাফেল ড্র ও খেলাধুলায় পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। সবশেষে সামগ্রিক আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকলকে সার্টিফিকেট অব পার্টিসিপেশন প্রদান করা হয়। সামগ্রিক সফরে স্বেচ্ছাশ্রম, সহযোগিতা ও আচরণ বিশ্লেষণ করে এগারোজন শিক্ষার্থীকে বেস্ট ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন নুরুন্নবী, বিশ্বজিৎ রায়, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, অহনা মালেক, রোকেয়া তাসনিম, লিমা খাতুন, মৌমিতা ইয়াসমিন হালিমা খাতুন, সুমাইয়া সুলতানা তমা ও সাইফুল ইসলাম খান। আগামী কোন অনুষ্ঠানে তাদের হাতে ক্রেস্ট ও পুরস্কার প্রদান করা হবে।
শিরোনাম:
- যশোরে হোটেল ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি : থানায় অভিযোগ
- হারানো সভ্যতার খোঁজে এম এম কলেজের ইতিহাস ক্লাবের অভিযান
- নিজেই অবৈধ দখল উচ্ছেদে নেমেছেন যশোরের ভারপ্রাপ্ত এসপি
- বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল : অধ্যাপক নার্গিস বেগম
- রমজানকে স্বাগত জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
- অভিভাবক হিসেবে সবাইকে সমন্বয় করে অর্পিত দায়িত্ব পালন করব : সাবু
- সাতক্ষীরায় সুলভ মূল্যে গরুর মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি শুরু
- অর্পণ দর্পণ ফাউণ্ডেশনের উদ্যোগে সুফিয়া খাতুন শিক্ষা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত