সাতক্ষীরা সংবাদদাতা
সাতক্ষীরার আমের সুনাম আছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। আমের সেই সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং অপরিপক্ব আম বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে এবারো আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডার (সময়সূচি) নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী সপ্তাহেই সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগসহ বিভিন্ন ধরনের বৈশাখী আম। সুগন্ধি আর মিষ্টি স্বাদের হিমসাগর পাওয়া যাবে ২০ মে। আর ল্যাংড়া আম পাওয়া যাবে মে মাসের শেষ দিকে। আগামী মাসের শুরুর দিকে মিলবে আম্রপালি।
বুধবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়। জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, অপরিপক্ব আম সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা বাজারজাতকরণে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে। প্রশাসনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাসহ দেশীয় বৈশাখী আম সংগ্রহ করা যাবে। হিমসাগর বাজারে আসবে ২০ মে। ল্যাংড়া আমের স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২৭ মে পর্যন্ত। ৫ জুন থেকে সংগ্রহ ও বাজারজাত করা হবে আম্রপালি।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, এ বছর সাতক্ষীরা জেলা থেকে ৭০ টন আম বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রপ্তানিযোগ্য আম নিশ্চিত করতে গুণগতমান রক্ষা ও নির্ধারিত সময়ের আগে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখা হবে। এই মৌসুমে আম সংগ্রহ ও পরিবহনে নজরদারি করতে মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত, চেকপোস্ট ও বিশেষ তদারকি দল কাজ করবে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে চালানো হবে প্রচার অভিযানও।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর চৌধুরী, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়েইব আহমদ, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জাতের আম পরিপক্ব হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আগেভাগে পাড়লে আমের স্বাদ ও গুণগত মান কমে যায়, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির সুযোগ ক্ষুণ্ন হয়। ২০১৫ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম ইউরোপে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। আম রপ্তানি থেকে জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে ১৩ হাজার ১০০ চাষি আম চাষ করেছেন। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬২ হাজার ৮০০ টন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার আম দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। জেলার আবহাওয়া ও মাটি এই অঞ্চলের আমকে করেছে সুস্বাদু, ঘ্রাণযুক্ত। মাটি ও আহবাওয়ার কারণে সাতক্ষীরা জেলার আমগাছে মুকুল দেশের অন্য এলাকা থেকে আগে আসে ও আমও আগে পাকে।