নড়াইল সংবাদদাতা
নড়াইলের কালিয়ায় উপজেলার বারইপাড়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর কচ্ছপ গতিতে চলছে কালিয়া বারইপাড়া সেতু নির্মাণের কাজ। আড়াই বছরে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় বছরেও কাজ শেষ হয়নি।
নির্মাণ কাজ শেষের দিকে এসে সেতুর নকশায় ত্রুটি থাকায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, অতিদ্রুতই সেতু নির্মাণের বাকি কাজ শেষ হবে।
কালিয়া উপজেলার পার-কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা এস কে কামাল বলেন, খেয়া পারের জন্য আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় রাতে নৌকা পাওয়া যায় না। আমাদের ভোগান্তির যেনো শেষ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই আবেদন, দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নেয়া হোক।
উপজেলার নোয়াগ্রাম এলাকার কলেজছাত্রী বৃষ্টি ফাতেমা বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে পার হয়। অনেক সময় খেয়া পাওয়া যায়, অনেক সময় যায় না। ঘাটগুলো ভালো না, ব্রিজটা হতে যেয়েও হচ্ছে না। স্কুল কলেজে যেতে সমস্যা হয়। কোনো রোগী অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারে না। ফেরি পার হয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে আসতে আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়। আমরা খুব দূরাবস্থায় আছি। ব্রিজটা যাতে দ্রুত হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলা শহর থেকে কালিয়া উপজেলা শহর ও ৮টি ইউনিয়নকে পৃথক করে রেখেছে নবগঙ্গা নদী। উপজেলার বারইপাড়া খেয়াঘাটে ২০১৭ সালে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নড়াইল-কালিয়া সড়কের ২১তম কিলোমিটারে নবগঙ্গা নদীর ওপর ৬৫১.৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থের বারইপাড়া সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন যশোরের ঠিকাদার মো. মইনুদ্দীন বাসী ও মো. জামিল ইকবাল। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তখন নির্দিষ্ট সময় শেষে কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ।
পরবর্তীতে আরও তিন বার সময় বৃদ্ধি করা হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শেষ সময়ে অর্থাৎ ৪র্থ বার মেয়াদ বৃদ্ধির সময় বাঁধে নকশা জটিলতা। সেতুর ছাদের কিছু অংশ নির্মাণ কাজ শেষে দেখা যায় সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। পরে নকশা পরিবর্তন করে উঁচু করে সেতু নির্মাণের জন্য নতুন নকশা অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় বাড়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কয়েক দফায় সময় ও অর্থ বেড়ে এখন ব্যয় একশ’ ৩৫ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে নড়াইল জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে কালিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন। ফলে তাদের ভোগান্তি কমবে। তবে সেতু নির্মাণের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। দ্রুত কাজ শেষ করার আহ্বান তাদের।
এ বিষয়ে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.নজরুল ইসলাম বলেন নকশা পরিবর্তনের কারণে আলাদা টেন্ডার করা হয়েছে। টেন্ডারটি লাইভে আছে। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারব।