বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো যশোরের মিফতাহুল জান্নাত এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা জান্নাতের এমন সাফল্যে খুশি পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকরা। মিফতাহুল জান্নাত শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। সে যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
জান্নাতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল জান্নাত। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পৌঁছালে উল্টো দিক থেকে আসা বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকেরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেন। এর তিন দিন পর ২৪ মার্চ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সে। কিন্তু সেদিন বৃত্তি পাওয়ার খবরেও মিফতাহুলের কোনো আনন্দ ছিল না। চিকিৎসা শেষে এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয়েছে মিফতাহুল জান্নাত। চালিয়ে গেছেন লেখাপড়া। তবে এ যাত্রাটা ছিল আরও কষ্টের।
মিফতাহুল জান্নাতের বাবা রফিকুল ইসলাম শার্শার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি কিরে মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। এতে রফিকুলের সাড়ে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় রফিকুলের। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে তার মাসে ১০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি জান্নাত ও তার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া করান তিনি। টানাটানির সংসারে থেকেই যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল জান্নাত এবং জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন তার চোখে মুখে আনন্দের ছটা। আনন্দে ভাসছে তার পরিবার ও শিক্ষকরাও।
ফলাফলের ব্যাপারে মিফতাহুল জান্নাত বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুশি। আমি ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্ট হোক, ভালো করে লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হবো। জান্নাতের পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, জান্নাত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এবার এসএসসি পরীক্ষাতেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুশি। ওর কষ্টটা আমি বুঝি। আমার খুব সামান্য আয়। তা-ই দিয়ে ওকে আমি লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছি। ও ডাক্তার হতে চায়। যত কষ্টই হোক, ওকে আমি শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে যাব।
বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এত বড় একটা দুর্ঘটনার পরও সে মনোবল হারায়নি। গরিব পরিবার থেকে আসা জান্নাত আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় খুবই ভালো করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।