বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হোসেনউদ্দীন হোসেন আর নেই। গুরুতর অসুস্থ হয়ে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহে….রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গত ১৪ মে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে যশোর কুইন্স হসপিটাল ও পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। আজ মঙ্গলবার জোহরবাদ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
হোসেনউদ্দীন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহানাজ রাহানা রত্না জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরবর্তীতে গল ব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এছাড়াও তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (১৪ মে) বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়া সিএমইচে স্থানান্তর করা হয়। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে ব্রেইন হ্যামারেজ ধরা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। বেশির ভাগ সময় তিনি সেন্সলেস ছিলেন (চেতনাহীন)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ঝিকরগাছা ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে সম্পন্ন করেন উচ্চ মাধ্যমিক। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম কবিতা কলকাতার দৈনিক পত্রিকা লোকসেবকে প্রকাশিত হয়।
পরবর্তীতে তার বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া শুরু করে। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে, নষ্ট মানুষ, অমৃত বৈদেশিক, সাধুহাটির লোকজন, ইঁদুর ও মানুষেরা, প্লাবন এবং একজন নুহ, ভলতেয়ার ফ্লবেয়ার কলসত্ব ত্রয়ী উপন্যাস ও যুগমানস, ঐতিহ্য আধুনিকতা ও আহসান হাবীব, বাংলার বিদ্রোহ, সমাজ সাহিত্য দর্শন প্রবন্ধ, রণক্ষেত্রে সারাবেলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, লোকলোকোত্তর গাঁথা কিংবদন্তি, বনভূমি ও অন্যান্য গল্প, অনন্য রবীন্দ্রনাথ।
উল্লেখ্য, কবি, লেখক, সাহিত্যক, গবেষক হোসেন উদ্দীন হোসেন ২০০৬ সালে টপ হান্ড্রেড রাইটার্স হিসেবে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে স্বর্ণপদক পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ২০২১ বাংলা একাডেমি থেকে প্রবন্ধ ও গবেষণায় পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ২০১০ সালে তার লেখা ‘ইঁদুর- মানুষেরা’র’ বইটি ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।