কেশবপুর সংবাদদাতা
যশোরের কেশবপুর পৌরসভায় আইওজিআইপি প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার করায় সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন। বুধবার এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ মহল্লাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের মধ্যকুল নাথপাড়া সড়ক পরিদর্শন করেন। এ সময় সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের খোয়া-বালি ব্যবহার করায় তিনি ওই সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সিডিউল অনুযায়ী সড়কটি নির্মাণের দাবি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জানান, তার চাকরি জীবনে এত নিম্নমানের কাজ তিনি আর কোথাও দেখেননি।
বিশেষ আইওজিআইপি প্রকল্পের আওতায় ৪টি প্যাকেজে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কেশবপুর পৌরসভার সড়ক ও ড্রেনসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তর ওই প্রকল্পের জন্য টেন্ডার আহবান করেন। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৪টি প্যাকেজের কাজ পান যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বনাত্তরের আবু সাঈদ। এই প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ০৭ নং ওয়ার্ডে মধ্যকুল নাথ পাড়ার কবির হোসেনের বাড়ির পাশ থেকে যশোর-সাতক্ষীরা মেইন সড়ক পর্যন্ত ৮৩০ মিটার লম্বা আরসিসি সড়কটি নির্মাণে ১নং ইটের খোয়া, বালি, প্রয়োজনীয় সিমেন্ট ব্যবহার করে সড়কটির তলদেশে ৪ ইঞ্চি সিসি ঢালাই এবং উপর অংশে ৭ ইঞ্চি আর সিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার সড়ক নির্মাণে ৩নং ইটের খোয়া, মাটি মিশ্রিত ভিট বালি এবং সিডিউল অনুযায়ী সিমেন্ট ব্যবহার না করে যেনতেনভাবে সড়কটি নির্মাণ করছিলেন। এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ মহল্লাবাসী ঠিকাদারকে সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার জন্য অনুরোধ করলেও ঠিকাদার তাদের অনুরোধ প্রত্যাখান করে কাজ অব্যাহত রাখেন। পরবর্তিতে মহল্লাবাসী ওই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করলে নির্বাহী অফিসার বুধবার বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারসহ সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় ওই সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।
গত ২৩ জুন থেকে সিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু সড়কটি নির্মানে কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, চওড়া কত মিটার কি কি সামগ্রি ব্যবহার করার কথা তা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন। অভিযোগ উঠেছে ৪৬ কোটি টাকার সকল অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদার সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে তার সিংহ ভাগ অর্থ পকেটস্থ করার পাঁয়তারা করছেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সিডিউল অনুযায়ি কাজ না করে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সড়ক নির্মাণে এলাকার কৃষকদের ফসলী ক্ষেত থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে সড়ক নির্মাণ করায় ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে কৃষকদের মধ্যে। সূত্র জানায়, এসব প্রকল্পের সামনে প্রকল্পের সাইন বোর্ড লাগানোর কথা থাকলেও এ প্রকল্পে তা মানা হয়নি। এতে সিডিউল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঠিকাদার আবু সাঈদের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান বলেন, নাথপাড়া আরসিসি সড়ক নির্মাণে একবস্তা সিমেন্টে ১২ ঝুড়ি খোয়া এবং ৬ ঝুড়ি বালি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মধ্যকুল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, তার বাড়ির পাশের রাস্তাটি নির্মাণে ৩ নং ইটের খোয়া, মাটি মিশ্রিত বালি এবং কম সিমেন্ট দিয়ে সিসি ঢালাই দেয়া হচ্ছে। যা একবারেই নিম্নমানের। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সড়কটি নষ্ট হয়ে পূর্বের চেহারায় ফিরে আসবে।
স্থানীয় শেখ আব্দুল গণি বলেন, নাথপাড়া সড়কটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আবু সাঈদ যেভাবে সড়ক নির্মাণ কাজ করছেন তাতে কয়েক মাসের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে।
ঠিকাদার আবু সাঈদ বলেন, সিডিউল অনুযায়ী মধ্যকুল নাথপাড়া সড়ক নির্মাণে সিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোন কারণে কাজটি বন্ধ করে দিলেন তা তার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এমএম নুর আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন তথ্য না দিয়ে পৌর মেয়র রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বলেন।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার সড়টির নির্মাণ কাজ করছেন। যা পৌরসভা থেকে তদরকি করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানসহ মহল্লাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মধ্যকুল নাথপাড়া সড়কে নির্মাণের কাজটি দেখতে যান। এ সময় দেখা যায়, সড়ক নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ঢালাইয়ে প্রয়োজনীয় সিমেন্টও ব্যবহার করা হচ্ছেনা। তাই সড়কটির নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।