নড়াইল সংবাদদাতা
নড়াইলে সোমবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় নড়াইল পৌরসভায় এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পৌরসভার বরাশুলা ঈদগাহের সামনে তাকে হত্যা করা হয়।
নিহত ওই যুবকের নাম মাজেদুল ইসলাম খান (২৮)। তিনি নড়াইল পৌরসভার বরাশুলা এলাকার জাফর খানের ছেলে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মাজেদুল ইসলামের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বরাশুলায় বাড়ি থেকে বাইরে বের হন মাজেদুল। আধা ঘণ্টা পর প্রায় ১০০ লোক তাকে ধাওয়া করে। কয়েকজন তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রেখে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে তার বাড়িতে থাকা দুটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং দোকানের মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
নিহতের বড় ভাই শরিফুল ইসলাম বলেন, তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করত। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘটনার পর তার ভাইকে প্রতিপক্ষ মেরে ফেলেছে। তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চান।
মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কারা, কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আমরা এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশত্যাগের খবরে গত সোমবার বিকেল চারটার পর থেকে নড়াইল শহরে বিজয়োল্লাসে নামে সাধারণ মানুষ। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এবং নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বোস এবং সাধারণ সম্পাদক নিজামুদ্দিন খানের বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা পরিষদের কার্যালয়সহ একাধিক বাড়ি ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
মঙ্গলবার সকালে শহর ঘুরে দেখা যায়, মহিষখোলা এলাকায় মাশরাফির দোতলা ভবনের ভেতরে অবশিষ্ট আর তেমন কিছুই নেই। দিনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাতভর চলেছে লুটপাট। তার পশ্চিম পাশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোসের বাড়ির অবস্থাও একই। বাইরে গ্যারেজে পড়ে আছে শুধু একটি প্রাইভেট কারের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ।
সেখানে কথা হয় মাশরাফির প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে। তিনি গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত সব দেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, ‘সারা রাত দুটি বাড়ি থেকে মালামাল লুটপাট হয়েছে। তিন-চারবার আগুন ধরিয়েছে। নিষেধ করেছিলাম, শোনেনি। উল্টো ধমক দিয়েছে। এগুলো ঠিক করেনি।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের কুড়িগ্রামে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামুদ্দিন খানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সেখানে সোমবার বিকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে দুটি গাড়িসহ বিভিন্ন মাল পুড়ে যায়। বাড়ির ভেতরের অনেক জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আরেক দফায় ওই বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
এর আগে শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সব জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে। বাকি যা ছিল, তা আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। সেই আগুন এখনো নিভু নিভু করে জ্বলছে। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উত্তর পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও পূর্ব পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ ছাড়া চৌরাস্তা এলাকায় জেলা পরিষদ কার্যালয় ও মুচিপোল এলাকায় এনআরবিসি ও সোনালি ব্যাংকে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতায় কাউকে না জড়ানোর জন্য আহ্বান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।