বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের দুঃখ ভবদহ। সেই নব্বই দশক থেকে জেলার তিনটি উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। সমস্যা সমাধানে বিগত সরকারগুলো স্থায়ী সমাধানে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হলেও বাস্তবে তা সুফল মেলেনি। তবে এবার জলাবদ্ধতার অবসানে আশার আলো দেখছেন দুর্ভোগের শিকার হওয়া মানুষেরা। অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশে বৃহস্পতিবার জলাবদ্ধতার শিকার হওয়া গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। তার এই সফরে ছিলেন সমস্যা সমাধানের টেকনিক্যাল টিমও। তারা দিনভর একদিকে যেমন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন; অন্যদিকে সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসে ভুক্তভোগীরা হয়েছেন আশান্বিত।
যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানিনিস্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ নাব্যতা হারিয়েছে। এতে নদী দিয়ে পানি নিস্কাশিত হয়না। দীর্ঘ চার দশক ধরে স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। অবর্ণনীয় দুঃখের মধ্যে চলে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবন। যে কারণে ভবদহকে ‘যশোরের দুঃখ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। গত দুই মাস ধরে বৃষ্টিতে ভবদহের বাকি অংশ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় চার লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে সড়কের ওপর। ভবদহের সমস্যা সমাধানে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। এর সমাধানে এ যাবত যত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে কোনো সুফল আসেনি। বরং এর সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিল, তারা শুধু লুটপাটই করেছে। এ নিয়ে অনেক বিশঙ্খলাও হয়েছে।
এমন পরিদর্শনে গত রোববার ভবদহ অঞ্চলের মানুষ স্থায়ী সমাধানের দাবি নিয়ে অবস্থান নেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি যশোর নেতাদের উদ্যোগে কালেক্টরেট চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে একপর্যায়ে তাদের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তিনি মুঠোফোনে জানান দ্রুতই সমস্যা সমাধানের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠাবেন এবং সমস্যা চিহ্নিত করবেন।
পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে বৃহস্পতিবার ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান ও তার টেকনিক্যাল টিম। এদিন সকালে অভয়নগর উপজেলার ভবদহ অঞ্চলের আমডাঙ্গা খাল ও ভবদহ স্লুইস গেট পরিদর্শন করেন। কথা বলেন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে। বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে ভবদহপাড়ের বাসিন্দা ও জেলার সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
সভায় ভুক্তভোগী বান্দিন্দারা ও দীর্ঘদিন ধরে ভবদহ সমস্যা নিরসনে আন্দোলনকারীরা তাদের মতামত প্রদান করেন। সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ভবদহ এলাকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। গত কয়েক বছরে এ জলাবদ্ধতা বেশি দেখা না দিলেও; এ বছর প্রকট আকারে ধারণ করেছে। আমরা সরেজমিনে ভবদহবাসী দুঃখ দেখেছি। ভুক্তভোগীদের দাবি শুনেছি। এবার স্থায়ীভাবে এই সমস্যা সমাধান করার জন্য বড় প্রকল্প নেয়া হবে। সেই প্রকল্প হবে ভবদহের স্থায়ী সমাধানের বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। আমডাঙ্গা খাল ও সেসব জায়গায় পানি প্রবাহিত হওয়ার খাল প্রস্তত করা হবে।
তবে তার আগে স্থানীয়দের সঙ্গে মতামত নেয়া হবে। যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় ভুক্তভোগীরা তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।
ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে সচিব ও তার টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এতে আমরা আশার আলো দেখছি। তবে আমরা সরকারের কাছে এর সফল বাস্তবায়নের দাবি জানাই। একই সাথে বিগত সরকারগুলোর নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পের লুটপাটের তদন্ত করে জড়িতদের বিচার করতে হবে।
আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু, লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, বিএনপির নেতা আবুল হোসেন আজাদ, জামায়াত নেতা অ্যাড. গাজী এনামুল হক প্রমুখ।