বাংলার ভোর প্রতিবেদক
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যশোরের বেজপাড়া বয়েজ ক্লাব পূজা কমিটি।
যেখানে সন্তানেরা তাদের মায়ের পা ধুয়ে-মিষ্টি মুখ করিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শুক্রবার সকালে শহরের বেজপাড়া পূজা মন্দিরে অষ্টমীর দিন ভিন্ন আঙ্গিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়।
মায়ের পা ধুয়ে সম্মান জানাতে পেরে একদিকে যেমন সন্তানেরা খুশি হয়েছেন; অন্যদিকে সন্তানের এমন ভালোবাসায় আবেগাপ¬ুত হয়েছেন মায়েরা। আর মায়ের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা বোধ বাড়াতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেজপাড়া বয়েজ ক্লাব কর্মকর্তাবৃন্দ।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজন উপলক্ষে শুক্রবার সকালে মন্দির প্রাঙ্গনে চেয়ারে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন বিভিন্ন বয়সী ৫০ জন মা। প্রথমে ধান ও দুর্বা দিয়ে আশির্বাদ প্রার্থনা করেন সন্তানেরা। এ সময় পানি নিয়ে একসঙ্গে পঞ্চাশের অধিক মায়ের পা ধুয়ে দেয় সন্তানরা। পরে মায়েদের মিষ্টিমুখ করান তারা। এ সময় আবেগে আল্পুত মায়েরা সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আশির্বাদ করেন। সন্তানেরা মেতে ওঠেন আনন্দে।
অনুষ্ঠানে মায়ের পা ধুয়ে দেয়া যশোর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী অধরা বিশ্বাস বলেন, প্রত্যেক সন্তানই তার মা-বাবাকে ভালবাসে। তবে সেটা বেশিরভাগ সময় প্রকাশ করতে পারে না। আজ আমরা এমন একটা সুযোগ পেয়েছি।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মায়ের প্রতি ভালবাসা শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। এমন একটা সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি বেজপাড়া ক্লাবকে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। অধরা বিশ্বাসের মা ঝুমুর গুপ্তা বলেন, সন্তানের প্রতি মায়ের আর্শিবাদ সব সময় থাকে। আজ দেবী দুর্গার সামনে সন্তানকে আশির্বাদ করতে পারছি।
‘খড়ের প্রতিমা পূজিস্ রে তোরা, মাকে ত’ তোরা পূজিস্নে! প্রতি মা’র মাঝে প্রতিমা বিরাজে হায় রে অন্ধ, বুঝিস্নে’- পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গানের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতেই মা রয়েছেন। সেই মাকে আমরা যত্ন করি না। অথচ প্রতিমা দুর্গাকে যত্ন করি। এতে মা দুর্গা খুশি হন না।
যদি নিজেদের মাকে শ্রদ্ধা করি; তাহলেই মা দুর্গা খুশি হন। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা দুর্গার সামনেই প্রকৃতি ব্যঞ্জনায় মাকে অনন্য শ্রদ্ধা জানালো। এটা আসলেই ব্যতিক্রম অনুষ্ঠান।’
এর আগে সকালে এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বেজপাড়া বয়েজ ক্লাব পূজা কমিটির সভাপতি সুশীল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নড়াইলের মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. তাপসী কাপুড়িয়া, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যশোরের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন ঘোষ, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যশোরের সভাপতি সন্তোষ দত্ত, সহ-সভাপতি অসীম মন্ডল প্রমুখ।