ফয়সাল হোসেন
সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিপাত ও পাশ্ববর্তি অন্যান্য এলাকার পানিতে তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ১৭ টি গ্রামই পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও শুক্রবারের ভারি বৃষ্টিতে আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। এতে করে প্রতিটি বাড়ি-ঘরের উঠানে পানি প্রবেশ করে পুনরায় পানিবন্ধী হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের অধিক পরিবার। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।
তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিয়নটির ১৭ টি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে পানিতে। টানা বর্ষণের ফলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিরাশুনী, লাউতাড়া, পাঁচরোখি,সুভাশুনী, মদনপুর, সুমজদিপুর, দেওয়ানী পাড়া গ্রাম। সকল এলাকার ধানও সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্য দুগর্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
পাঁচরোখি গ্রামে শেখ আব্দুস ছাত্তার, মদনপুর গ্রামের আব্দুল খালেক, সুমজদিপুর গ্রামের সুবাসী দাশ,শিরাশুনী গ্রামের মোমিন শেখ, আসমা বেগম জানান, তাঁরা প্রায় দুই মাস পানিবন্ধী। তাদের বাথরুমে যাওয়া,রান্না করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সাথে চারিদিকে পানি থাকায় মারাত্মকভাবে বিষধর সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচরোখী গ্রামের শেখ আব্দুস ছাত্তার বাড়ি হতে ইতিমধ্য দুটি পদ্মগোখরা সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। ভদ্র নদীর পুনঃখনন ছাড়া এই অঞ্চলের পানি নিস্কাশন সম্ভব না। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নসহ তালা উপজেলা সকল মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘেরের ভেড়ির বাঁধের সবজি। পাশাপাশি আমন ধান, কৃষকদের সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই এলাকার পানি নিস্কাশনের জন্য সাধারণত যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদী দিয়ে পানি সরবরাহ করতো। বর্তমানে ওই এলাকার নরনিয়া স্লুইস গেট পলিমাটিতে উঁচু হয়ে পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামাঞ্চলের রাস্তা,বাড়ি-ঘর,মৎস্য ঘের প্লাবিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যদি বৃষ্টিপাত নাও হয় তাহলেও এই ইউনিয়নে আগামী ৩-৪ মাস পানিবন্দি থাকবে। ফলে ইরি আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
ইতিমধ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক শেখ মো. রাসেল ও উপজেলা সহকারী কমিশনরার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল আমিন তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন ও ভদ্রা নদী নরনিয়া খালের স্লুইস গেট পরিদর্শন ও নওয়াপাড়া হতে গোপালপুর স্লুইস গেট পর্যন্ত পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত পানি নিস্কাশনের স¦ার্থে গোপালপুর স্লুইস গেটে দু’পাশে জমে থাকা পলি অপসারণ করতে ভাসমান স্কেভেটর ও স্কেভেটর দিয়ে পলি অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক শেখ মো. রাসেল জানান, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পানি নিস্কাশনের জন্য যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার নরনিয়া স্লুইস গেট এলাকায় পলি মাটি অপসারণের জন্য তিন-চরাটি স্কেভেটর দিয়ে কাজ চলমান আছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি যৌক্তিক কোন সমাধান নয়। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।