বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বরেণ্য রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী কাল। ২০১৮ সালের এই দিনে ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে (বর্তমানে এভারকেয়ার) চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরবিদায় নেন জনপ্রিয় এ রাজনীতিক। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যশোর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দোয়া মাহফিল, দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই খাতা বিতরণ। এছাড়া মঙ্গলবার টাউনহল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভা। যাতে প্রধান অতিথি থাকবেন ভার্চুয়ালি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা তরিকুল ইসলামের। পুরো দক্ষিণবঙ্গে বিএনপির রাজনীতির পুরোধা ছিলেন অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক। ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে জন্ম হয় তার। পিতা আব্দুল আজিজ ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মাতা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী।
জানা যায়, ১৯৬১ সালে তিনি যশোর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৩ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬৯ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তরিকুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসাবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৩ সালে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে রাজনৈতিক মামলায় তরিকুল ইসলামকে বেশ কিছুদিন কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্যে তাকে রাজবন্দি হিসাবে ৯ মাস যশোর ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়।
বিএনপির দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৭০ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তরিকুল ইসলাম যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি তিন মাস কারাভোগ করেন।
১৯৭৮ সালে তিনি যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তাকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯০’র গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তরিকুল ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপালনকালীন তিনি পর্যায়ক্রমে সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, তথ্য, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ষ্পষ্টভাষী ও জনদরদী রাজনীতিবিদ। আমৃত্যু তিনি বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তরিকুল ইসলামের পত্নী অধ্যাপক নার্গিস বেগম যশোরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষাবিদ। তার সুযোগ্য উত্তরসুরী বড় ছেলে শান্তনু ইসলাম সুমিত দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক। ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত পিতার মতোই একজন রাজনীতিক। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় (ভারপ্রাপ্ত) সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।