মনিরুজ্জামান মনির
বছরের পর বছর যশোর সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন অন্তত ১০টি সড়কের কার্পেটিংয়ের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ফেলে রাখা সড়কের পুনঃনির্মাণ কাজ অবশেষে শুরু হয়েছে। ৫ মার্চ বুধবার দৈনিক বাংলার ভোরে এ সংক্রান্ত সবিস্তার সংবাদ প্রকাশের টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপর তাদের চাপে রাস্তাগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিস্ট ঠিকাদারগণ।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে এসব সড়কের কাজ শুরু হলেও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ম্যাকাডামের কাজ করে ফেলে রাখায় খানাখন্দে পরিণত হয়। সড়কে ফেলে রাখা খোয়ার লাল গুড়া-বালিতে পথচারি এবং সড়কের পাশে বসতবাড়ির লোকজন নাস্তানাবুদ হতে হয়। বৃষ্টি হলে কাঁদায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এস ব রাস্তা। তাই দ্রুত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার দাবি ছিল এলাকাবাসীর।
এলজিইডি অফিসের তথ্যমতে, যশোর সদর উপজেলার উপশহর তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ পান ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় নতুন ঠিকাদার হারুন সর্দার ৫ বছর পরে আবারও কাজ শুরু করেছেন। সদর উপজেলার হুদার মোড় হতে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ পান ঠিকাদার হানিফ ট্রেডিং এণ্ড স্টিল হাউজ। এ সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে। শর্র্শুনাদাহ-ভবানিপুর সড়কের এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পান ঠিকাদার মেসার্স নাহিদ এন্টারপ্রাইজের আব্দুর রউফ। ২০২৪ সালের জুনে রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বসুন্দিয়া ইউপি হতে সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কে ৪.১১৩ কিলোমিটার ৫ কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮৪ টাকার কাজ শেষ হয়েছে।
মনোহরপুর যোগিপাড়া হতে ওসমানপন সড়কে ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পান মের্সাস রেনু এন্টারপ্রাইজের আনন্দ বিশ্বাস। কাজ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া সড়কে ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৬ আগস্ট। ৫ বছর আগে মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ হয়। মালঞ্চী কোল্ড স্টোর হতে আরাবপুর ইউপি সড়কে ১.৭২ কিলোমিটার ১ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৯ টাকার কাজ পায় মোড়ল এন্টারপ্রাইজের শাহরুল ইসলাম। যা শুরু হওয়ার কথা ২৫ নভেম্বরের ২০২০ এবং শেষ হওয়ার কথা ২০ জুলই ২০২১ সালে। কিন্তু সেখানে মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়।
কেসমত হৈবতপুরের ০.৮৫ কিলোমিটার ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪শ’ টাকার কাজ। যা শুরু হওয়ার কথা ১৬ মার্চ ২০২১ সালে এবং শেষ হওয়ার কথা ২০ আগস্ট ২০২১ সালে। কিন্তু সেখানে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পার হয়েছে ৪ বছর। কেসমত হৈবতপুরের ২.১৮ কিলোমিটার ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৯ টাকার কাজ। যা শুরু যাওয়ার কথা ২৭ আগস্ট ২০১৯ এবং শেষ হওয়ার কথা ২৩ মে ২০২০ সালে। কিন্তু সেখানে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গেছে ৫ বছর। এদিকে চুড়ামনকাঠি এলাকায় একটি সড়ক ডিসেম্বরের ২০২৪ সালে কার্পেটিং শেষ করার কথা।
তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমানে এ সড়কগুলোর অধিকাংশেই কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি সড়কের কাজ ইতিমধ্যে শেষও হয়েছে। বাকি সড়কগলোর কার্পেটিংয়ের কাজ জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাপানিয়া গ্রামের জাকির হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে রাস্তার অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখছিল ঠিকাদাররা। কিন্তু এ রাস্তার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পরে কারেন্টের মত কার্পেটিং হয়েছে। এ রাস্তা ছিল আমাদের কয়েকটি গ্রামের চলাচলের মাধ্যম। আসলে আনন্দের কথা বলে বোঝানো যাবে না। দোয়া তো মানুষের মন থেকে আসে।
ফুলবাড়ী গ্রামের রওশন আলী জানান, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। এ রাস্তায় ম্যাকাডামের কাজ করে আজ ৫-৬ বছর ফেলে রাখছিল। আমরা খুব দুর্ভোগে ছিলাম। কোন উপায় ছিল না, শুনতাম ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছে। তবে আজ শুধুমাত্র কাজ শুরু হয়েছে সাংবাদিকরা নিউজ করার পর। এখন মনে একটু আশা ফিরে পাইছি রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায়। আজিমদ্দিন জানান, আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। আজ রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে শুধু আমি না আমার এলাকার মানুষ আনন্দে আত্মহারা। আমরা চাই এ রাস্তার কাজ সুন্দরভাবে শেষ হোক। আমি বলেছি এ রাস্তা করতে এলাকার কেউ সমস্যা তৈরি করলে আমরা সকলে মিলে প্রতিহত করবো।
ঠিকাদার হারুন সর্দার জানান, এ রাস্তার ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় পরে আমি নতুন করে কাজ পাই। আশা করি দ্রুত কাজ শেষ হবে। ৫ বছর পড়ে থাকা পুরাতন কাজ। লাভ না জেনেও করছি শুধুমাত্র এলাকার মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং স্যারেদের অনুরোধে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী মাসের শুরুতে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করার আশা আছে।
যশোর সদর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আছিফ রেজা বলেন, যশোর সদরে পেন্ডিং কাজগুলো নতুন করে শুরু হয়েছে। আশা করি দু’মাসের মধ্যে ৮০ শতাংশ কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হবে। কয়েকটি কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এবং অধিকাংশ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে।
যশোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, হাপানিয়াসহ কয়েকটি রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করি জুন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ রাস্তার কাজ শেষ করা হবে।