এসএম স্বজন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো শিশুর স্বপ্ন থামিয়ে দিতে পারে না, যদি পাশে দাঁড়ায় সহানুভূতিশীল মানুষ ও প্রতিষ্ঠান। তেমনই এক অনুপ্রেরণার নাম আছিয়া খাতুন। যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের আমির আলী এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। বয়স মাত্র সাত, কিন্তু জীবন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি।
আছিয়া জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার এক পায়ে জটিল সমস্যা থাকায় সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। ফলে প্রতিদিন তাকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। আছিয়ার বাবা বিপুল হোসেন একজন দিনমজুর, যার পক্ষে প্রতিদিন এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই সীমাবদ্ধতার কারণে আছিয়ার স্কুলে উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে পড়ে, যা তার শিক্ষাজীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল।
এই অবস্থায় আছিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আন্জুমান-আরা বেগম বিষয়টি নজরে আনেন মাসুদুর খান ফাউণ্ডেশনের। আছিয়ার জন্য একটি হুইল চেয়ারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি জানান, ওই চেয়ারের মাধ্যমে আছিয়ার সহপাঠীরা তাকে নিয়মিত স্কুলে নিয়ে আসতে পারবে এবং তার পড়াশোনা বাধাহীনভাবে চলতে পারবে।
সাড়া দেয় মাসুদুর খান ফাউণ্ডেশন। গত ১৫ মে তারা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউণ্ডেশনের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিনের সহায়তায় আছিয়াকে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করে। এই ছোট্ট উপহারটি আছিয়ার জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন পূরণের সারথী হবে এই আশা সকলের। তাইত আছিয়াও এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তার মুখে ফুটে উঠেছে হাসি, চোখে এসেছে আত্মবিশ্বাস। বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়েছে তার। হুইল চেয়ারের দুই চাকা যেন তার ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলার প্রতীক।
এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সামান্য সহানুভূতি যেকোনো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। আছিয়ার গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় সহযোগিতাই ভবিষ্যতের পথ তৈরির প্রধান উপাদন।