বাংলার ভোর ডেস্ক
ইরানের নির্দিষ্ট কিছু নিশানায় আঘাত হানতে চাইলেও ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে নিজেদের পুরোপুরি জড়িয়ে ফেলতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেবেন কিনা তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা কীভাবে যুদ্ধে পুরোপুরি না জড়িয়েও নির্দিষ্ট ওই নিশানাগুলোতে আঘাত হানা যায় তার পথ খুঁজতে আলোচনা শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। ইসরায়েল গতসপ্তাহে শুক্রবার ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর ছয় দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
সংঘর্ষ যাতে আর বেশি দিন না গড়ায় তা নিশ্চিত করাটা এখন ট্রাম্পের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও ট্রাম্পকে এই সংঘাতে যোগ দিয়ে ইরানের পামাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই ধরনের একটি আন্তর্জাতিক সংঘাতে নিমজ্জিত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্রাম্প। কারণ, তিনি বরাবরই এমন সংঘাত এড়িয়ে চলার অঙ্গীকার করে এসেছেন।
দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক সিএনএন-কে জানান, সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মিত্রদেশের কাছে খবর ছিল যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর হামলা শুরুর পর ইসসরায়েল প্রথম এক সপ্তাহে কতটা সাফল্য পেল, তা দেখার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন অপেক্ষা করার পরিকল্পনা করছে। এরপরই হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেলেও দেশটিতে হামলা চালানো হবে কি না তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।তিনি মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এখনও কোনও একদিক বা অন্যদিকে ঝুঁকে পড়েননি বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।
বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্র সিএনএন-কে জানিয়েছেন, ইরানের উপর হামলার পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তবে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ইরান পিছু হটে কি না, তাও দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসের বক্তব্যে ট্রাম্প তার মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, আমি কোনও কিছু চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এক সেকেন্ড আগে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করি। বিশেষ করে যুদ্ধের ক্ষেত্রে। সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। এক অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত একটি অবস্থানেও বিষয়টি চলে যেতে পারে।
ওয়াকিবহাল এক সূত্র সিএনএন-কে বলেছেন, ট্রাম্প সম্ভাব্য বিকল্পগুলো বিবেচনা করে দেখছেন। ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্র হামলা করা মানেই যে বিদেশের যুদ্ধে সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াশিংটন হস্তক্ষেপ করছে, এমন ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। আর ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনদের যুক্তি হল, নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যে হামলা বৃহত্তর পরিসরে হামলা করার চাইতে আলাদা। বৃহত্তর অভিযান সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সির মেয়াদে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করা ডেভিড ফ্রিডম্যান স্যোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য কিছু এমওএবি (ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট বা মাদার অব অল বোম্বস) বোমা ফেলতে পারে এবং তারপর হামলা থেকে সরে আসতে পারে।
ট্রাম্প যখন এই সব বিকল্প নিয়ে ভাবছেন, তখন তার প্রশাসন এখনও মিত্রদের কথা শুনছে। মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণাত্মকভাবে সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ারই আহ্বান জানাচ্ছে। এর পেছনে আছে নানা কারণ। আর তা হল, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। যে কোনও মার্কিন হামলার ক্ষেত্রে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় নামার পথ বেছে নিতে পারে। আর ইরানে ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে পাল্টা জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার ইরান এরই মধ্যে করেছে।