বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার দাইতলা গ্রামে আনোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২৭ বছর পর আদালতের রায়ে দুই আসামির ৪২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। একই সাথে তাদের অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। হত্যা ও অপহরণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই আসামিকে খালাস ও বিচার চলাকালে অপর তিন আসামির মৃত্যু হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিশেষ দায়রা জজ ও বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এক রায়ে এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশেষ পিপি সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, যশোর সদরের রায়মানিক গ্রামের মোস্তফা সরদার ও আলীম সরদার।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, রায়মানিক গ্রামের মোস্তফা সরদার একটি মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন।
তার অনুপস্থিতিতে আনোয়ার হোসেন তার স্ত্রী জাহেদা বেগমের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। একবছর পর মোস্তফা সরদার মামলা থেকে খালাস পেয়ে বাড়ি ফিরে আনোয়ার হোসেনকে মারার পরিকল্পনা করতে থাকেন।
আনোয়ার হোসেন বিষয়টি বুঝতে পেরে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। পরে তারই কয়েক নিকট জনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে আনোয়ার বাড়ি ফিরে আসেন।
১৯৯৬ সালের ৩১ জুলাই বিকেলে আনোয়ার হোসেন বাড়ি থেকে তার গ্যারেজে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোস্তফা, আলিম ও হাসানসহ ৮ জন রাইফেল ও ছোরার মুখে আনোয়ারকে ধরে নিয়ে যায়।
এ সময় তার পিতা ও প্রথম স্ত্রী বাধা দিলে তাদের ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে আনোয়ারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুজি করে আনোয়ারকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয় স্বজনেরা।
পরদিন সকালে পাগলার বিলের হামিদপুর-কচুয়া রাস্তায় আনোয়ারের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ১ আগস্ট নিহত আনোয়ার হোসেন মোড়লের স্ত্রী রিজিয়া বেগম মোস্তফা, আলিম, হাসান, আছাদ ও মফজেলসহ অপরিচিত ব্যক্তিদের আসমি করে কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ২৫ জুন এজাহারনামীয় ৫ জনসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম। অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকায় আদালতে চার্জশিট জমা দেন তিনি।
দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি মোস্তফা সরদার ও আলীম সরদারের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক বছর করে কারদণ্ড ও অপহরণের দায়ে প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
এ মামলার অপর আসামি জাহেদা বেগম ও মোশারফ হোসেন মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিচার চলাকালীন হাসান, আছাদ মুন্সি ও মফজেলের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আগেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। রায়ে সাজা একই সাথে চলবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত মোস্তফা সরদার ও আলীম সরদার পলাতক।