নিজস্ব প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে উপজেলার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কেনার অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন লটারিতে বিজয়ী কৃষকরা।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সরেজমিন মোবারকগঞ্জ চিনিকলের পিছনের একটি নির্জন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, জঙ্গলের মধ্যে থাকা ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৭৭০৩ নম্বরের একটি ট্রাক থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা নামানো হচ্ছে। ৪৫০ বস্তা ধান নড়াইল থেকে আনা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রলিতে করে কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এ সময় জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ৪০০টি খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এদিন প্রায় ৪৫০ বস্তা ধান আরিফুজ্জামান সুমন নামের এক ব্যক্তি গুদামে দিয়েছে। এগুলো লটারিতে বিজয়ী কৃষকের নামে প্রবেশ হচ্ছে গুদামে।
কালীগঞ্জ খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে লটারিতে বিজয়ী ৫৫৮ জন কৃষকের কাছ ১৬৭৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান গুদামে দিতে পারবেন। সরকার এ বছর ১২৮০ টাকা মণপ্রতি ধান ক্রয় করছে। এখন পর্যন্ত ৫০% লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এই কমিটি ৮ সদস্য বিশিষ্ট।
গুদামের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছরই এই ধান প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদামে ধান প্রবেশ করানো হয়। এর সাথে অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত। ধান কেনা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিন্তু বিল হয় কৃষকের নামে।
অগ্রণী ব্যাংক থেকে এই বিল প্রদান করা হয়। লটারিতে বিজয়ী কৃষকের ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এরপর সেই কৃষকের কাছ থেকে চেক রেখে দেয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এছাড়াও এই অসাধু কাজ করার জন্য গুদামের সিসি টিভিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা গুদাম থেকে সিন্ডিকেটের কাছে দেওয়া হয়। যে বস্তাগুলো বাইরে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। সরকারি বস্তায় তারা ধান নিয়ে গুদামে আসে। গত কয়েক বছর ধরে আব্দুর রউফ, ইসরাইল হোসেন, আরিফ হোসেন, আরিফুজ্জামান সুমন নামে ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট করে লটারিতে বিজয়ী কৃষকের নামে গুদামে ধান বিক্রি করছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করলে সেই ধানের আদ্রতাও পরীক্ষা করা হয় না।
লটারি বিজয়ী কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়েছিল। এরপর একদিন অগ্রণী ব্যাংকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে একটি চেক বই দিলে চেকের একটি পাতা নিয়ে নেয়। কোনদিন তারা গুদামে ধান দেন নি।
গুদামে ধান নিয়ে আসা ট্রাকের ড্রাইভার কালাম হোসেন জানান, নড়াইল থেকে ৪৫০ বস্তা ধান বোঝাই করে সুগার মিলের মধ্যে নিয়ে আসি। এখান থেকে ট্রলিতে করে খাদ্য গুদামে নিয়ে যাচ্ছে। ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় এই ধানগুলো নিয়ে আসি। এর বেশি কিছু জানি না।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাঈমুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর তিনি জানান, কিছু ধান গুদামে ঢুকেছিল সেগুলো ফেরত দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের এই বস্তা বাইরে কিনতে পাওয়া যায়। জঙ্গলে পাওয়া বস্তা গুদাম থেকে দেয়া হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহদী হাসান শিহাব বলেন, সকালে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এভাবে ধান ক্রয় করার কোন সুযোগ নেই। সোমবার সকালে যে ধান গুদামে ঢুকেছে এই ধানের কোন বিল দেয়া হবে না।
ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান জানান, বিষয়টি শুনে তিনি খাদ্য গুদামে গিয়েছিলেন এবং প্রকৃত লটারিতে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সকালে গুদামে প্রবেশ করা ধানগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।