বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে যশোর জেলা বিএনপি। এ কমিটির মেয়াদ ছয় বছর অতিবাহিত হলেও তারা এখনো কাউন্সিলর করতে পারেনি। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, শহর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে বিএনপি সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও উপজেলার রাজনীতিতে অগোছালো। জেলার ১৬টি ইউনিটের মধ্যে ৮টি কমিটি গঠন করতে পারলেও বাকিগুলোতে কমিটি না হওয়াতে তৃণমূলে বিরাজ করছে অসন্তোষ।
এদিকে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই গ্রুপিং, দখলবাজি-হামলা-চাঁদাবাজিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রীতিমতো শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে জেলার শীর্ষনেতাদের। যদিও শৃঙ্খলা ফিরাতে গত দুই সপ্তাহে এক উপজেলা কমিটি স্থগিতসহ দলটির উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বহিস্কার করা হয়েছে। এসব কাজের ইন্ধনদাতা জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতাদের করা হয়েছে সর্তক। তবে জেলার শীর্ষ নেতারা বলছেন, ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও বৈষম্য আন্দোলন ও সরকার পতনের আন্দোলনে সেটি ভাটা পড়ে। তার পরেও আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার দলটির প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর উদযাপন করবে জেলা বিএনপি। শহরের লালদিঘির পাড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দেশে চলমান বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা, সম্প্রতি ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদ নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, মেয়াদোত্তীর্ণের ১০ বছর পর ২০১৮ সালের ২০ মে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল যশোর জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি। দলীয় কার্যালয়ে নির্বাহী সভায় কমিটি ভেঙ্গে ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে আর সদস্য সচিব করা হয় অ্যাড. সাবেরুল হক সাবুকে। আহ্বায়ক কমিটিকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ছয় বছর। জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারেনি জেলা বিএনপি। পাশাপাশি উপজেলার সাংগঠনিক অবস্থাও অগোছালো। আটটি উপজেলার মধ্যে যশোর সদর, বাঘারপাড়া, মণিরামপুর, কেশবপুরে কমিটি করা হলেও সেটি আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে একই পন্থায় এই চার উপজেলার পৌর কমিটিগুলোও করা হয়েছে। গ্রুপিং নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জেরে কমিটি করতে পারেনি চৌগাছা, ঝিকরগাছা, অভয়নগর ও শার্শা উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলো। এর মধ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিক দ্বন্দ্বে ও সংঘর্ষের জেরে কমিটি স্থগিত রাখা হয়েছে ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটি। এছাড়া জেলার ৯৩টি ইউনিয়নে বেশির ভাগ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায়ের কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, ইউনিয়ন ও উপজেলাতে সাংগঠনিক কমিটি না থাকাতে তৃণমূলের রাজনীতিতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূলে কার্যক্রম অগোছালো। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগ্রহ কম রয়েছে নেতাদের মধ্যে। তবে বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে পুলিশের বাধার কারণে উপজেলার সব কমিটি সম্পন্ন করতে পারেনি বলে জানান নেতাকর্মীরা।
কেশবপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মশিয়ার রহমান বলেন, আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠন। ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিও নেই অনেক দিন। তবে কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলমান। বিগত সরকারের আমলে পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বাধার কারণে উপজেলাতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও দল গঠনের প্রক্রিয়া হয়ে উঠছে না। তার পরেও জেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনসহ যেকোন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হয়েছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, উপজেলায় শীর্ষ নেতাদের দলীয় কোন্দল প্রকট। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলে দুই পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হতে পারে। এই আশঙ্কায় আহ্বায়ক কমিটির নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেননি। ফলে পদ পেতে ইচ্ছুক নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এতে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন না হলেও প্রক্রিয়া ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এর পরেই উপজেলার কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, দলে যে বিশৃঙ্খলা ছিল, তা দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে কাটিয়ে উঠেছি। নেতারা অনেক উজ্জীবিত। তৃণমূলে সাংগঠনিক কমিটি না থাকায় কোনো প্রভাব পড়ছে না।
গ্রুপিং, দখলবাজি-হামলা-চাঁদাবাজিতে অস্থিরতা:
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই যশোর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দখলবাজি-হামলা-চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেন। প্রকাশ্যে আসে গ্রুপিংও। এতে দলে দেখা দেয় অস্থিরতা। জেলা কমিটির কর্মসূচি দিলেও গ্রুপিয়ের কারণে পৃথক পৃথক কর্মসূচি করতে দেখা গেছে যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা ও মণিরামপুরে। নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং দ্বদ্বে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটে ঝিকরগাছায়। দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে শেষ মেষ উপজেলার সাংগঠনিক কমিটিকে স্থগিত করে জেলা কমিটি। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙ্গে স্থাপনা নির্মাণ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্থাপনা দখল, ভাঙচুর, হুমকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে যশোরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের জেলা ও উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে। শোকজ ও সর্তক করা হয়েছে জেলা উপজেলার শীর্ষনেতাদেরও।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলার দায়ে ঝিকরগাছা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সরকার পতনের পর দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও এখন সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘চার উপজেলা ও পৌর কমিটি করা যেতে পারেনি নানা কারণে। সেগুলোর কমিটির কাজ শেষ করার জন্য সিদ্ধান্ত এসেছে। দ্রুতই করা হবে। আট উপজেলার কমিটি করা হলেই জেলার সম্মেলনের প্রস্তুতি দেয়া হবে।’
Subscribe to Updates
শিরোনাম:
- মহানবী (সা.) কে কটুক্তির প্রতিবাদে কালীগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ
- বাঘারপাড়ায় হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশ
- ঝিকরগাছায় হামলার শিকার দুই ছাত্রদল নেতা
- দুর্গোৎসবে নিরাপত্তায় কাজ করবে বিএনপি : অমিত
- নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি : নিয়মিত বাজার মনিটরিং দাবি বাগআঁচড়াবাসীর
- আশাশুনিতে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সম্মেলন
- খুলনা বিভাগীয় কারাতে প্রশিক্ষণ সেমিনার
- বিশ্বনবীকে নিয়ে কটুক্তি : শার্শায় বিক্ষোভ
নেতৃত্বের বিকাশ না হওয়ায় হতাশ : ১৬টি ইউনিটের ৮ কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ
যশোর জেলা বিএনপি : আহ্বায়ক কমিটিতে ছয় বছর পার