বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছায় বাঁওড় দখল নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ে মাছ ধরার সময় এ সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোটরসাইকেল ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আহতরা হলেন, হুদাপাড়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে শরিফুল (৩০), রবিউল ইসলামের ছেলে শাহদুল ইসলাম (৩০), চাঁদপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (৩২) পৌরসভার বিশ্বাসপাড়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে উজ্জল হোসেন (৪০), কুটিপাড়ার মৃত মশিয়ার রহমানের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৬০) কারিগরপাড়ার তাইজুল ইসলামের ছেলে আব্দুস সামাদ (৫৫), যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের জহুর আলী ছেলে কালাম হোসেন (৫৭)। কালাম হোসেন ও শরিফুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা যায়, চৌগাছা উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়টি উপজেলা মৎসজীবী লীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের অনুসারীরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিল। ৫ আগস্টের পরে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সালাহউদ্দীন ও চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিমকে ২০ শতাংশ শেয়ার (লভ্যাংশ) প্রদান করা শর্তে মাছ চাষ করে আবুল কাশেম। কিছুদিন পূর্বে আবুল কাশেম যশোর জেলা বিএনপি নেতা কালাম হোসেনের কাছে বাওড়ের ২০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন। কালামের নেতৃত্বে চৌগাছা বিএনপির এক পক্ষের ১৫ থেকে ২০ জনকে সাথে নিয়ে শুক্রবার সকালে মাছ ধরতে যায়। এতে সালাউদ্দীন ও আব্দুর রহিমের লোকজন বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের ৭জন আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চৌগাছা থানার পুলিশ পৌঁছলে দুইপক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও দুটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চৌগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ৫ আগস্টের পরে মাছ লুট হয়ে যাচ্ছিল। বাঁওড়ের মাছ টিকিয়ে রাখতে প্রথমে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সালাউদ্দীন ও চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিমকে একটি চুক্তির মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য বাঁওড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে বাঁওড় সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি বিএনপি নেতা কালামের কাছে বাঁওড়ের ২০% শেয়ার ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ৫ আগস্টের পর ৪০-৪৫দিন ধরে বাঁওড় লুট হচ্ছিল। এরপর বাঁওড়ের ইজারাদাররা উপজেলা বিএনপির কাছে সহযোগিতা চায়। তখন সবার উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপি ও স্থানীয়রা বাঁওড়ের মাছ লুট ঠেকিয়ে দিবে। তাদের মাছ পাহারা দিয়ে দিবো। যখন ফিসিং হবে, তখন আমাদের ২০ শতাংশ ভাগ দিবে। সেভাবেই চলছিল। হঠাৎ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাদ বাঁওড়ে বাইরের লোকজনকে সম্পৃক্ত করেছে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আজ তারা বাঁওড়ে মাছ ধরতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের মারমারি হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলীয় কোন সম্পৃক্ততা নেই।’
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বাঁওড়ের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোটরসাইকেল ও এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।