বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বাংলাদেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ধর্ষণ, হয়রানি, সাইবার বুলিংসহ পারিবারিক নির্যাতনের মত ঘটনাক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই; বরং এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত সহিংসতা। এ বাস্তবতায় সমাজ ও রাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার সকালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) যশোরের আয়োজনে মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। প্রেসক্লাব যশোরের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন।
সনাক সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা মাসুমা বেগম বলেন, নারী দিবসের তাৎপর্য অনেক, তবে সমাজে নারীদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন। প্রচলিত আইনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যার ফলে নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন করে তোলে।
অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার কনা বলেন, নারীর অধিকার কোনো দয়া বা দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়। এটি তার সাংবিধানিক অধিকার। আমরা বেগম রোকেয়ার কথা বলে থাকি। কিন্তু আজও সমাজ তার দর্শন সহজে গ্রহণ করতে পারে না।
সনাক সদস্য অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, বাংলাদেশ ‘সিডো সনদ’ এ স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও বাস্তবে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা বিদ্যমান। মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ, তনু হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা এ সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির করুণ চিত্র তুলে ধরে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের প্রশংসা করে বলেন, সমাজে নারীদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মানববন্ধনে সনাক, ইয়েস সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংহতি প্রকাশ করেন। ইয়েস সদস্য সুমা সরকার নারী দিবসের ধারণাপত্র পাঠ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বহুমুখী। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সঠিক পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এসময় নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপি কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার টিআইবি প্রণীত ১১ দফা দাবিনামা পেশ করা হয়। ইয়েস সদস্যরা নারীর অধিকার বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। আগামী ১২ মার্চ মাহিদিয়া গ্রামে কর্মজীবী নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও নাগরিক সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচির সমাপ্তি হবে।