বাংলার ভোর ডেস্ক
আসন্ন চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পর এবার চিঠি দিয়ে এবং সাংগঠনিকভাবে এই নির্দেশনা দেওয়া হলো।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়ে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে অনুযায়ী, নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়টি জানাতে শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় দফতর থেকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনাটি জানাতে মন্ত্রী-এমপিদের নামে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্ভরশীল একটি স্ত্রূ। সূত্রমতে, চিঠিতে দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দেশনার কথা সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমেও পুনরায় জানানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের আত্মীয়দের প্রার্থী করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেমে পড়ছেন। এতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হচ্ছে এবং নির্বাচনি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ছে। দল ও সরকার শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সে কারণে প্রথমে দলের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে বলা হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় চিঠি দেয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগেও দলের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। এবার দলীয় ও সাংগঠনিকভাবে জানানো হচ্ছে। সব মন্ত্রী-এমপিকে এই নির্দেশনা জানানো হচ্ছে। আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ উপজেলা নির্বাচন চাই।’
দলটির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এরই মধ্যে দলের নির্দেশনা এমপি-মন্ত্রীদের জানানো শুরু হয়েছে। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে তার ছেলেকে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে দফতর সম্পাদক ও উপদফতর সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতর সম্পাদককে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয়দের প্রার্থী হওয়া মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তাদের দলীয় প্রধানের নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের কথা বলার নির্দেশনা দেন তিনি।
জানা গেছে, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করেন সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এই দুই নেতার ছেলেরা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন এবং তারা তাদের ছেলেদের পক্ষে কাজ করছেন।
সূত্র মতে, আগামী ২ মে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে। ওই অধিবেশন সংসদীয় দলের বৈঠকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় চূড়ান্ত নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শিগগিরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরও বৈঠক হতে পারে। সেখানেও বিষয়টি আলোচিত হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, এমপি-মন্ত্রীরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নানাভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৩ এপ্রিল।
আর দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় আগামী ২১ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, এ ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২১ এপ্রিল, বাছাই ২৩ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল এবং প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। এই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, দেশের ৪৮১টি উপজেলায় চার ধাপের নির্বাচন শুরু হবে ৮ মে, শেষ হবে জুনের প্রথম পক্ষে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুই ধাপের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে।