হাসান আদিত্য
রোববার বেলা সাড়ে ১১টা। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। ফল জানতে বিদ্যালয়ে ভিড় করবে শিক্ষার্থীরা, আনন্দ-উৎসব করবে। কিন্তু উল্টো চিত্র যশোর জিলা স্কুলে। প্রযুক্তির কারণে মোবাইল-ইন্টারনেটে আগেই পাচ্ছেন পরীক্ষার ফল। তাই ফল প্রকাশ হলেও স্বনামধন্য এই বিদ্যাপীঠে দেখা মেলেনি ফল প্রার্থীদের। শুধু জিলা স্কুল নয়; যশোর শহরের অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে তেমন দেখা যায়নি ফল প্রার্থীদের। নেচে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উল্লাস করলেও সেটি করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের এই দিনে প্রতিটি স্কুল মুখর হয়ে ওঠতো বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। কিন্তু এখন আর সেই উচ্ছ্বাস নেই। প্রযুক্তির কারণে ক্যাম্পাসের উচ্ছ্বাস চলে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার সকালে গণভবনে ডিজিটালি আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। ৯টি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৭, মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৬৬, কারিগরি বোর্ডে ৮১ দশমিক ৩৮। আর গতবছরের বিপর্যয় কাটিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশসেরা হয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ বছর যশোর বোর্ড থেকে ২০ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৩৩, যা দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সেরা।
এই ফলাফলে যশোরের বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের উল্লাসে মেতেছে। আগের বছরগুলোয় এদিনে স্কুলে স্কুলে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা যেত। কিন্তু এবার তা চোখে পড়েনি। অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ফলাফল দেখছে। কেউ কেউ ক্যাম্পাসে এলেও তাদের মধ্যে কোনো উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়নি। আগে ফলাফল প্রকাশের দিনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মিলন মেলায় রূপান্তরিত হতো স্কুলগুলো। কিন্তু এবার অনেক স্কুলে অনেকটা শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা নেই বললেই চলে, নেই আনন্দ-উল্লাসও।
রোববার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যেয়ে দেখা গেছে ক্যাম্পাসে বেশির ভাগ বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণা। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত শীট বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো আছে। কিন্তু ওখানে ফলপ্রত্যাশীদের কোন ভিড় লক্ষ করা যায়নি। বিদ্যালয়টিতে গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি বা ভিডিও নিতে গেলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা ব্যান্ড বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা যায়।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আহসান পারভেজ জানান, ‘বিদ্যালয়ে এবার ২৫৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৮০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাকিরা সবাই বিভিন্ন গ্রেডে উর্ত্তীণ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির কারণে এসএমএস ও ইন্টারনেটে আগেই ফল জেনে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। শুধু ফল নয় কোনো বিষয়ে কত পেয়েছে তাও জেনে যাচ্ছে। তাই আগের মত ফল জানতে কলেজে আসার প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, আগে ফল ঘোষণার দিন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা দুপুর থেকে বসে থাকত। ফল শোনার পর উচ্ছ্বাস আনন্দে মেতে উঠতো। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে বাসাতেই ফল জানার কারণে ফলপ্রত্যাশীদের ক্যাম্পাসে নাচে-গানের উল্লাস দেখা যায় না।’
বোর্ডে টানানো রেজাল্ট নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিল না শিক্ষার্থীরা তারা। এর অতীত পরিবেশ নিয়েও নেই তেমন ধারণা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের সিনিয়রদেরও রেজাল্টের জন্য আসতে দেখি নাই। স্বাভাবিক দিনের মতোই ক্লাস চলতো।
অনলাইনে রেজাল্ট দেখা যায়, তাই আমাদেরও অনেকে স্কুলে আসে না। মাকে নিয়ে মিষ্টি নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছেন তাবাচ্ছুম মুন। তিনি বলেন, ‘ফল প্রকাশের দুই মিনিট পরই ইন্টারনেটে রেজাল্ট দেখে ফেলেছি। পরে আমরা যারা ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলাম তারা ফোনে যোগাযোগ করে স্কুলে আসি। স্যার-ম্যামদের সঙ্গে দেখা করলাম। যাদের রেজাল্ট মনমতো হয়নি, তারা হয়তো আজ বের হবে না।’
জিলা স্কুলের নাজমুল হক শান্তর বাবা নজরুর হক বলেন, ‘এখনকার বাচ্চারা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে দেখবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আনন্দ করবে। কিন্তু ফলাফলের দিন ক্যাম্পাসে এলেও কোনো আনন্দ-উচ্ছ্বাস নেই।
একই বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা হুমায়ন সুলতান বলেন, ‘আমার ছেলে স্কুলে এসেছে। ভালো ফলাফল করেছে কিন্তু ওরা কেন যেন উচ্ছ্বাস করতে চায় না। আমাদের সময় পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার দিন ছিল উৎসবের দিনের মতো। কত আনন্দ হতো সে সময়।’