বাংলা ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছার বল্লভপুর গ্রামের চাঁদা না পেয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি ও বাঁওড় দখলের চেষ্টা করেছে এলাকার চিহ্নিত দুবৃর্ত্তরা। এসময় সমিতির সদস্যদের মাছ শিকারের জাল কেটে নষ্ট করে দেয় সন্ত্রাসীরা।
শুক্রবার সকালে বল্লভপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর হিন্দুপল্লীতে আংতক বিরাজ করছে। যেকোন সময় বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে এ আশংকায় ২০ জুন চৌগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) আবেদন করে বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারক কুমার বিশ্বাস।
জিডিতে অভিযুক্তরা হলেন, বল্লভপুর গ্রামের ফকির চাঁদের ছেলে আইজেল হক, মতলেব মন্ডলের ছেলে জিন্নাত মন্ডল, নিমাই বিশ্বাসের ছেলে কার্তিক বিশ্বাস, হাশেম আলী ছেলে সবদার, রহিম বক্সের ছেলে খালেক হোসেন, হাবিছনের ছেলে সোহরাব গাজী, কিনে মল্লিকের ছেলে গহর মল্লিক, মাবুদ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান, কিনে মল্লিকের ছেলে শুকুর মল্লিক, সিরাজুল ইসলামের ছেলে আলম বিশ্বাস।
বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারক কুমার বিশ্বাস বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ছয় বছর মেয়াদে (১৪৩১-১৪৩৬ বঙ্গাব্দ) চৌগাছার বল্লভপুর বাঁওড় জলমহালটি ইজারা নিয়ে চাষ করছে বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। এর আগে তিন বছর মেয়াদে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে সমিতি বাঁওড়ে মাছ চাষ করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত জোরপূর্বক বাঁওড়টি দখলের পাঁয়তারা করছে। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরের দিনও দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ওই চক্রটি। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে আমাদের হুমকি দেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান বিজয়ী হলে বাঁওড় দখল করে নিবে। তিনি বিজয়ী হওয়ার পর থেকে আমাদেরকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছে সন্ত্রাসীরা। আমাদের ক্ষতি করতে পারে, এই আশংকায় গত ২০ জুন ২০২৪ তারিখে চৌগাছা থানায় ১০জনের নাম উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।
আজ (২১জুন) সকালে সমিতির সদস্য বাঁওড়ের মাছ শিকারের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় বল্লভপুর গ্রামের ফকির চাঁদের ছেলে আইজেল হক, মতলেব মন্ডলের ছেলে জিন্নাত মন্ডল, নিমাই বিশ্বাসের ছেলে কার্তিক বিশ্বাস, হাশেম আলীর ছেলে সবদারের নেতৃত্বে ৪০/৫০জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হানা দেয়। তার হুংকার দেয় তাদেরকে কোটি টাকার চাঁদা পরিশোধ না করে বাঁওড়ে মাছ শিকারে নামলে হাত পা কেটে নেয়া হবে। এ সময় অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করে তারা।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে চৌগাছা থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সন্ত্রাসীরা প্রায় সাত লাখ টাকা মূল্যের জাল কেটে নষ্ট করে দেয়। একই সাথে সদস্যদের লাঞ্ছিত করে। বাধা দিলে জায়গায় হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। পুরো ঘটনাটি চৌগাছা থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের অত্যচারে আমরা চরম আতংকে দিন পার করছি। বর্তমানে বাওড়ে আমাদের প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার সম্পদ রয়েছে। যেকোন সময় বড় ধরণে ক্ষতির আশংকা করছি।
একই সাথে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শংকিত। এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, বর্তমানে যারা বাওড়টি ইজারদার, তারা আজ সকালে মাছ ধরতে গেলে অপর একটি পক্ষ বাওড়ে আসে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দু’পক্ষকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেকেছেন। সমাধানের টেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, ‘বর্তমান ইজারদাররা আজ মাছ ধরবেন, এ মর্মে তারা লিখিত আকারে জানিয়েছেন। তার মাছ ধরতে নামলে অপর একটি পক্ষ বাধা দেয়। সেটা নিয়ে উত্তেজনকর পরিস্থিতির সৃষ্টির হয়। বিষয়টি সমাধান করার জন্য দু’পক্ষকে ডাকা হবে।’