বাংলার ভোর ডেস্ক
সারা দেশের বন্যাকবলিত ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। সচিব বলেন, এ মুহূর্তে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দি।
আর এই বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা বন্যা কবলিত। বন্যায় এখন পর্যন্ত কুমিল্লায় ৪, কক্সবাজারে ৩, চট্টগ্রামে ২, ফেনীতে ১, নোয়াখালীতে ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন মারা গেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের তথ্য উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। ফলে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হয়নি। ফলে উজানে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার বন্য পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই।
ফলে দেশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, গোমতী ও হালদা নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আজ সকাল থেকে হালদা নদীর পানি কমতে শুরু করে। এতে ওই এলাকায় বন্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজ্জামেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, পানি নামছে ধীরে। অনেকেই ত্রাণ ও বোট নিয়ে এসেছেন।
তবে বড় বোট নামানো যাচ্ছে না। আবার রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সড়ক পথেও সব এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে না। তবে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নতুন করে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও জোরারগঞ্জের নুতন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর এসেছে।