বাংলার ভোর প্রতিবেদক
লিবিয়ায় পাচারের শিকার সৈয়দ আব্দুস সালাম (৪২) নামে যশোরের এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দেশে ফেরার পর রোববার যশোরের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার খলসি গ্রামের মৃত সৈয়দ তোজাম্মেল হোসেনের ছেলে।
পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, সৈয়দ আবদুস সালামকে পাচারের মামলাটি আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পারেন ভিকটিম সৈয়দ আবদুস সালাম লিবিয়াতে আটক আছে। তখন বিদেশে থাকা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য আসামি নওয়াব আলী সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করা হয়।
এরপর নওয়াব আলী ভিকটিম সালামের সাথে তদন্তকারী কর্মকর্তার ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলিয়ে দেয়। নওয়াব আলী ভিকটিম সালামকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। পিবিআই যশোরের সার্বিক প্রচেষ্টায় ভিকটিম সালাম দেশে ফেরত আসে। ভিকটিমকে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করার জন্য রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তিনি ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম সৈয়দ আব্দুস সালাম (৪২) পেশায় একজন কৃষক। পরিবারিক স্বচ্ছলতার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভিকটিমের প্রতিবেশি আসামি নওয়াব আলী বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমকে রোমানিয়ায় পাঠাতে পারবে বলে জানান। তখন ভিকটিম তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে রোমানিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে নওয়াব আলী ভিকটিমকে জানান তাকে রোমানিয়াতে না ইতালি পাঠাতে পারবে। তখন তার কথা মত ভিকটিমের সাথে আসামি নওয়াব আলীর চার লক্ষ টাকার চুক্তি হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী টাকা নিয়ে আসামি নওয়াব আলী ভিকটিমকে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিমান বন্দরে দিয়ে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে দুই দিন অবস্থান করার পর মিশরে পাঁচ ঘন্টা বিরতির পর লিবিয়া নিয়ে একটি বাসায় ভিতর আটক রাখে। সেখান থেকে ২০ থেকে ২২ দিন পর নওয়াব আলী ভিকটিমকে ইতালি পাঠানোর জন্য অপরিচিত কিছু লোকের কাছে পাঠায়।
তখন তারা ভিকটিমকে আসামি নাদিম ও আসামি হাসানের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। ভিকটিম তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং পরবর্তীতে আসামিরা ভিকটিমে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটক করে রাখে। ভিকটিমকে আটক রেখে আসামিরা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। ভিকটিমকে নির্যাতন করে তার পরিবারের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় ১৫ লাখ টাকা আদায় করে। এরপরও তারা ভিকটিমকে মুক্ত করে দেয়নি। তখন তার পরিবারের লোকজন বুঝতে পারে ভিকটিম কোন মানবপাচার চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। তাকে উদ্ধারের জন্য ২০২৪ সালের ২ মে বিজ্ঞ আদালতে মানব পাচার মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে।