বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে সিনেপ্লেক্স। ঐতিহ্যবাহী মণিহার সিনেমা হলের দোতলায় তৈরি হচ্ছে এই অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্সটি। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মণিহার সিনেমা হলের কর্ণধার জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী নভেম্বরে এই উন্নতমানের সিনেপ্লেক্সটি উদ্বোধন করা হবে। এখন কিছু সাজসজ্জা ও স্ক্রিন বসানোর কাজ চলছে। তাছাড়া উন্নত বসার সিট, এসি ও মনোরম লাইটিংসহ ডলবি স্যারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম এর কাজ শেষ হয়েছে। আর কিছুদিনের অপেক্ষা তার পরই নতুন যাত্রা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ভালো পরিবেশসহ নানা সুবিধার জন্য সিনেপ্লেক্স এর দর্শকপ্রিয়তা এখন অনেক বেশি। যশোরের এই সিনেপ্লেক্সটিতে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ বিনোদনের নতুন জায়গা খুঁজে পাবেন।
যশোরকে বলা হয় দেশের প্রথম ডিজিটাল শহর। সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু এই যশোরে ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় এই সিনেমা হলটি। ৪ বিঘা জমির উপর দৃষ্টি নন্দন এই সিনেমা হলটি নির্মাণ করেন ব্যবসায়ি প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম। যার নকশা করেছিলেন স্থপতি মো. হানিফ। মণিহারে প্রথম দিন মুক্তি পেয়েছিল ‘জনি’ সিনেমা। এর অভিনয়ে ছিলেন সোহেল রানা, জসিম, সুচরিতা। ‘মণিহার সবচেয়ে বেশি ব্যবসা সফল ছবি ছিল “বেদের মেয়ে জোসনা” সিনেমাটি। সময়ের বিবর্তন থ্রিডি সিনেমার এই যুগের দর্শকের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে সারা দেশের মতো যশোরের আরো চারটি সিনেমা হল বন্ধ হলেও দর্শক চাহিদা পূরণ করে চলছিল মণিহার সিনেমা হলটি। এই সকল দর্শকের বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করতে মণিহার সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মণিহার সিনেমা হলের দোতালার একটি অংশ সিনেপ্লেক্সে রূপান্তরের।
ভালো পরিবেশ, উন্নত সাউন্ড সিস্টেম ও আধুনিক প্রযুক্তি যোগ করে সিনেমাপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে বলেই আশা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মোল্লা ফারুক আহমেদের। বর্তমানে এই সিনেপ্লেক্সে দর্শকদের জন্য থাকছে অত্যাধুনিক ৭০ সিট, অত্যাধুনিক সিলভার স্ক্রিণ, সাউন্ড সিস্টেমসহ টুডি-থ্রিডি সিনেমাসহ সকল প্রকার সিনেমা দেখার ব্যবস্থা। সিনেপ্লেক্সটি উদ্বোধনের দিনের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চেষ্টা করা হচ্ছে ভারতীয় ব্লকবাস্টার সিনেমা সিংহাম এগেইন দিয়ে। না হলে বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানের প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা দরদ মুক্তির দিন এই সিনেপ্লেক্সটি যাত্রা শুরু করতে পারে।
এছাড়াও মণিহার সিনেমা হলটিতে আরো দুইটি সিনেপ্লেক্স খোলার সিদ্ধান্ত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য পুরানো ডিজিটাল মণিহার সিনেমা হলটি একই সাথে চালাবেন তারা তবে কমবে সিট সংখ্যা।
যশোর শহরেই একসময় পাঁচটি সিনেমা হল ছিল। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সবই। এরই মাঝে দীর্ঘদিন ধরেই যশোরের সিনেমা প্রেমিদের চাহিদা পূরণ করে চলছে এই মণিহার সিনেমা হলটি। এসময় কথা হয় মনিহার সিনেমা হলের একাউনটেন্ট তোফাজ্জেল হোসেনের সাথে তিনি জানান আকাশ সংস্কৃতির দাপট আর ঘরে ঘরে টেলিভিশনের সঙ্গে ফেসবুক ও ইউটিউবের ব্যবহার ধস নেমেছে হল ব্যবসায়। একসময় মণিহার সিনেমা হলের কদর ছিল দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। এই সিনেমা হল কেন্দ্র করে অনেকের কর্মসংস্থান হয়। ম্যানেজার, টিকিট কাউন্টার মাস্টার, রিল মাস্টার, প্রচারম্যান, মাইকম্যান, গেটম্যানসহ অনেকের জীবিকা নির্বাহ হতো এ হলকে ঘিরে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিনেমা শিল্পে ধ্বস নামাতে অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশাতে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের নতুন প্রচেষ্টা এই উন্নত মানের সিনেপ্লেক্স। যা অনেকের কর্মসংস্থানের সাথে সাথে সিনেমা প্রেমি দর্শকদের চাহিদা মেটাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আবারও ঘুরে দাড়াবে সিনেমা শিল্প।
এ প্রসঙ্গে যশোরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিপাঙ্কর দাস রতন বলেন, আমাদের ছোট বেলায় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল চলচ্চিত্র। কালের বিবর্তনে টেলিভিশন এসেছে। আর এখন আকাশ সংস্কৃতি, মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগ। সিনেমার চাহিদা কমেছে। তবে সিনেপ্লেক্সগুলিতে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। এখানে থ্রিডি মেশিন, অত্যাধুনিক সাউণ্ড দর্শকদের অন্যরকম বিনোদন দেয়। মণিহার সিনেমা হলে সিনেপ্লেক্স আশা করি বর্তমান দর্শকদের আবারও ভাল সিনেমা দিয়ে দর্শকের আকর্ষিত করবে।