বাংলার ভোর প্রতিবেদক
কোথাও খানাখন্দ, আবার কোথাও পিচ উঠে গেছে। সড়ক নির্মাণের বছর না ঘুরতেই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেড় ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। এমন বেহাল দশা খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কের। খুলনা-সাতক্ষীরা, যশোর-খুলনা, ঝিনাইদহ-যশোর, খুলনা-মোংলা, মহাসড়কসহ বিভাগের অন্তত ৫টি আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। যদিও সড়ক বিভাগের দাবি, সবগুলো সড়ক নিয়েই বড় আকারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তার পরেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এসব সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বিআরটিএর দেয়া তথ্য মতে, গত ১১ মাসে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৬৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৯০ জন। আহত হয়েছেন আরও ছয় শতাধিক।
ঝিনাইদহ থেকে যশোরগামী বাসের চালক আব্দুল হাকিম মোল্লা বলেন, প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। যশোর পর্যন্ত পৌঁছাতে যেখানে সময় প্রয়োজন হতো আগে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা, এখন আড়াই ঘণ্টা তিন ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যাচ্ছে না। গাড়ির টায়ার ফেটে যাচ্ছে আরও ক্ষতি হচ্ছে।
আরেক চালক হাসিবুর রহমান এই সড়ক দিয়েই নিয়মিত ভোমরা স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে চলাচল করেন। তিনি বলেন, সড়কের বিভিন্ন স্থানে এমন নাজুক যে, চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী। প্রতিদিনই আমাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। গাড়ি নষ্ট হয়। মাত্র কয়েক বছর আগে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এখনই এই অবস্থা। সড়কটির পুনরায় বড় আকারে সংস্কার করা প্রয়োজন।
শুধুমাত্র যশোর ঝিনাইদহ মহাসড়ক নয়, বিভাগের অন্তত ৫টি আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কের এমন অবস্থা। এর মধ্যে যশোর-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের উপরিভাগের কোথাও ছোট-বড় গর্ত, আবার কোথাও উঠে গেছে পিচ। যশোর-খুলনা মহাসড়কে কখনও গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, কখনও টায়ার ফেটে যাচ্ছে। কোথাও পিচ জড়ো হয়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু ঢিবি। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন ও যাত্রী-সাধারণ।
সড়ক ব্যবহারকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের উন্নয়ন করা হলো। কিন্তু তা টেকসই হচ্ছে না। সড়কে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও পিচ জড়ো হয়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু ঢিবি। কখনও গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, কখনও টায়ার ফেটে যাচ্ছে। সুস্থ মানুষও অনেক সময় এ পথে চলাচল করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সবমিলিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। তাদের দাবি অনিয়ম দুর্নীতির কারণেই সড়কের এই বেহাল দশা। তারা দ্রুত এই সড়কের সঠিকভাবে সংস্কার চান।
সড়ক বিভাগ, যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, যশোর-খুলনা মহাসড়কের জরুরি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী মাসে সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
এদিকে, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের অবস্থা আরও বেহাল। ঝিনাইদহ থেকে যশোরগামী ভুটিয়ারগাতী, তেঁতুলতলা, বিষয়খালী, নিমতলাসহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে এমন ছোট-বড় গর্তের। এখন ধুলার কারণে চলা দায় হয়েছে পড়েছে। চলাচলের জন্য এসব স্থানে ইটের সলিং করায় ভোগান্তি যেন চরমে পৌঁছেছে। প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। আর সড়কে বিকল হচ্ছে যানবাহন। দ্রুত সড়ক মেরামত করে চলাচলের অনুপযোগী করার দাবি স্থানীয় ও চলাচলকারীদের। এদিকে সুন্দরবনে যাওয়ার একমাত্র সড়ক পথ, সাতক্ষীরা-শ্যামনগর আঞ্চলিক মহাসড়কটির অবস্থাও খারাপ। দীর্ঘ এক যুগেও সংস্কার হয়নি সড়কটিতে। এতে পর্যটক কমছে সুন্দরবনে, চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন জেলার চারটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ।
সাতক্ষীরার জেলা ব্রাণ্ড ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন’ হলেও দীর্ঘ এক যুগ সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা সাতক্ষীরা-শ্যামনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক। এতে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন জেলার চারটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। সাধারণ মানুষ তো ভোগান্তির শিকার হচ্ছেই, রোগী চিকিৎসার জন্য আনতে গেলে তারা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে। সব ধরনের গাড়ির ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে অভিযোগ এনে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন গাড়ি চালক ও এলাকাবাসী। সাতক্ষীরা পুলিশিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম বাবলার মতে, এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি মেরামত হলে, পর্যটক বাড়ত বিশ্ব বিখ্যাত সুন্দরবনে।
সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বর্ষার কারণে এ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, টেন্ডারের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদনের আগেই সব টেন্ডার বাতিল করে নতুন ভাবে প্রস্তুতির কাজ চলছে। একই চিত্র দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরে যাওয়ার পথ খুলনা-মোংলা মহাসড়কেও। সড়কটির অন্তত ১০ কিলোমিটার রাস্তায় গতি কমিয়ে প্রতিনিয়ত হেলেদুলে চলাচল করছে বন্দরগামী ভারী যানবাহন। যদিও সড়ক বিভাগের দাবি, যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি ও সক্ষমতার থেকে ভারী পণ্য চলাচলে সড়ক টেকানো যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি সড়কেই আলাদা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানায় তারা।
সদর ও জনপথ খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, গত দুই বছরে খুলনা বিভাগের এসব মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে ভোমরা, বেনাপোল ও মোংলা সমুদ্র বন্দরগামী ভারী পণ্য নিয়ে যানবাহন চলাচল বেড়েছে। এসব সড়কে সর্বোচ্চ ওজন নেয়ার সক্ষমতা সাড়ে ২২ টন হলেও অধিকাংশ পণ্যবাহী যানবাহন চলছে ২০ টনের উপরে পণ্য নিয়ে। ফলে সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তবে সবগুলো সড়কে বড় আকারে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। যেসব সড়কে জরুরি সংস্কার প্রয়োজন, সেসব জায়গায় আমরা নিয়মিত সংস্কার করে যাচ্ছি। দক্ষিণাঞ্চলের এসব মহাসড়কের এমন বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানি।