স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোরের কেশবপুর উপজেলার চারটি গ্রাম এখন কাঠের কুটির শিল্পের জন্য পরিচিত। আলতাপোল, কন্দর্পপুর, বড়েঙ্গা ও মঙ্গলকোট গ্রামের শত শত মানুষ এই শিল্পে কাজ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।
এক সময়ের দিনমজুর বা অন্যের জমিতে কামলা খেটে খাওয়া মানুষগুলো এখন এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী। ছোট ছোট কাঠের টুকরা থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মোমদানি, ফুলদানি, চুড়ির আলনা, কলস, বাটি, খুনতিসহ নানা ধরনের নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রি।
প্রায় দুই যুগ আগে আলতাপোল গ্রামের ইনসার আলী ভারত থেকে এই শিল্পের কাজ শিখে এসে শুরু করেন। তার সাফল্য দেখে এলাকার আরও অনেকে এই কাজে যুক্ত হন। বর্তমানে এই চারটি গ্রামে প্রায় ৩০০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ জড়িত। তারা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন। এই পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
তবে, এই অঞ্চলের কাঠের কুটির শিল্প এখন কেবল স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে না। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা ও সঠিক বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা গেলে এই শিল্প আরও প্রসারিত হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।
ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, এই শিল্প থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। তবে এই পণ্যগুলো বৃহৎ পরিসরে বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হলে বছরে ৩০০ কোটি টাকার বেশি আয় করা যাবে।
এ শিল্পের শ্রমিক ইসমাইল হোসেন বলেন, এই কাজ করে তার সংসার চলে। প্রতি পিস পণ্য তৈরি করে ৮ থেকে ১৫ টাকা পান। প্রতিদিন গড়ে হাজার টাকা ইনকাম হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে ভোগান্তি হয়।
অন্য এক শ্রমিক আলতাফ মোড়ল বলেন, দীর্ঘদিন এই পেশায় জড়িত তিনি। এই কাজের আয় দিয়ে সংসার চলে তার। আগে এই পেশায় লোকজন কম ছিল। দুই এক বছর আগে নতুন শ্রমিক আসলেও এখন আর কেউ আসছে না এই কাজে।
আলমগীর হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন করে কারখানা তৈরি হচ্ছে না। শ্রমিকদের অগ্রিম এককালিন মজুরি দিতে হয়। যেটা সব মালিকের পক্ষে সম্ভব না।
এদিকে, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নত হবে। তেমনি কারিগররাও আরও বেশি লাভবান হবেন।