♦ দুদকের মামলার আসামি জামাই-শাশুড়ি
♦ শাশুড়ির নামে এক কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬২ টাকার অবৈধ সম্পদ
প্রতীক চৌধুরী
দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশে যশোর শহরে রাজাবরদাকান্ত রোডের রেলগেট এলাকার জমিসহ পাঁচতলা আলিশান বাড়ি ‘রাশিদা মহল’ ক্রোক করেছে জেলা প্রশাসন। বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে আলোচিত বাড়িটির মালিক ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্তকৃত গাড়িচালক মহসিন আলীর শাশুড়ি ফিরোজা বেগম। বাড়ির সামনে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে ক্রোককৃত সম্পত্তির রিসিভার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। বাড়ির মালিক মোছা. ফিরোজা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গালদা গ্রামের মৃত রফিক উল্লাহর স্ত্রী। তার মেয়ের জামাই একই উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্তকৃত গাড়িকচালক মহসিন আলী। তারা দুইজনই দুদকের মামলার আসামি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় আদালতের নির্দেশে জমিসহ রাশিদা মহল বাড়িটি ক্রোক করা হয়েছে। আদালতের আদেশে ওই ভবনের রিসিভার হিসেবে জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক প্রতি ছয় মাস পরপর ওই ভবনের আয় ব্যয়ের হিসেব আদালতে দাখিল করবে। ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
জানা যায়, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর ও রুপান্তর করে শাশুড়ি মোছা. ফিরোজা বেগমকে এক কোটি ৭৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬২ টাকা ৮৫ পয়সা জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের সহযোগিতা করেছেন তার মেয়ের জামাই ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্তকৃত গাড়িচালক মহসীন আলী। তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর ফিরোজা বেগম ও মহসীন আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক খন্দকার নিলুফা জাহান। মামলা নম্বর, জিআর-১৫৩/২০২৩ ও দুদক সাজেকা ঢাকা-১ এর মামলা নম্বর ১৮ (১১) ২০২৩। ওই মামলায় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর স্পেশাল জজ আদালত ঢাকার এক আদেশে মোছা. ফিরোজা বেগমের নামে ক্রয়কৃত যশোর পৌরসভার রাজা বরদাকান্ত রোডে অবস্থিত ৭৭ নম্বর চাঁচড়া মৌজার এসএ দাগ নম্বর ৮১৭ , আরএস দাগ নম্বর ২১৯১ (সাব রেজিস্ট্রি অফিস যশোর এর দলিল নম্বর ১৮৬০, তারিখ ২৭/০২/২০০৮) এর ৭.৭৪ শতাংশ জমিসহ বিল্ডিং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ধারা ২১ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর ১৮ গ মোতাবেক ক্রোক করে জেলা প্রশাসক যশোরকে রিসিভার নিয়োগ দিয়েছেন। গত ৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড ওই ভবনের সামনে টাঙিয়ে দিয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ক্রোক সম্পত্তি কোনভাবে বা কোন প্রকারে অন্যত্র হস্তান্তর, উক্ত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট কোন প্রকার লেনদেন বা উক্ত সম্পত্তিকে কোনভাবে দায়মুক্ত করা আইনত নিষিদ্ধ।
শনিবার সকালে শহরে রাজাবরদাকান্ত রোডের রেলগেট এলাকার পাঁচতলা আলিশান বাড়ি ‘রাশিদা মহল’ গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। জানতে চাইলে তারা বলেন, এই ভবনে নিতলতা থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া আছে। এখানে খেলাধূলার পুরস্কার (ক্রেস্ট, ট্রফি) তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখানেই তারা কাজ করেন। কর্মরত শ্রমিকরা ভবনের মালিককে তারা চিনেন না। বাড়ির মালিকরা তেমন কেউ আসেনও না। ভবনের নিচতলার আরেকটি ইউনিটে রয়েছে মোটরযান মেরামতের গ্যারেজ। এই গ্যারেজ মালিক বলেন, ভবন মালিকের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে তাদের প্রতিনিধি এসে ভাড়া নিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসনের লোকজন এসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। শুনছি দুর্নীতির মামলায় ভবনটি ক্রোক করেছে আদালত।’
বাড়িটির আশপাশের একাধিক দোকানদার ও প্রতিবেশি জানান, বাড়িটির মালিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের গাড়িচালক মহসীন আলী ও তার স্ত্রী পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরখাস্তকৃত অফিস সহকারী (স্টেনোগ্রাফার) রাশিদা বেগম। তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ দিয়ে ২০০৮ সালে রাশিদা বেগমের মা ফিরোজা বেগমের নামে ৭ দশমিক ৭৪ শতক জমি ক্রয় করা হয়। পরবর্তীতে পাঁচতলা আলিশান বাড়ি তৈরি করা হয়। এলাকার লোকজন মহসীন আলীকে সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা মনে করতেন। পরে দুর্নীতির মামলা হলে তাদের সম্পর্কে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।