বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগীরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর মেডিকেল কলেজের সামনে যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। এতে এক ঘন্টা যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, যশোর পৌর এলাকার একাংশের পানি সাত নম্বর ওয়ার্ডের টিবি ক্লিনিক, শংকরপুর হয়ে হরিণার বিলে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এ অঞ্চলের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে গড়ে তোলা হয়নি। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সড়ক। ঘরে প্রবেশ করেছে পানি। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। গত তিন দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন তারা। নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে সমস্যার সমাধানে রাস্তায় নেমে এসেছেন। অবিলম্বে তারা পানি নিস্কাশন উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক যুগ ধরে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আসছি। কিন্তু মেয়রের পর মেয়র যায়, সরকারের পর সরকার যায়। আমাদের ভোগান্তির সমাধান নেয়।
তিনি বলেন, আমরা তো শহরে বাস করতে পৌর ট্যাক্স দিচ্ছি, তবে আমাদের সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না কেন।’
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্থানীয়রা পানি নিস্কাশনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। কিছুক্ষণ সড়কে যানজট হলেও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’
এ বিষয়ে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পয়ঃ ও পানি নিস্কাশন) এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘ড্রেনগুলো প্রতিনিয়তই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। তবে শনিবারে যশোরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ পানি নেমে গেছে। তবে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা রয়েছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের শনিবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে। এদিন বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত কয়েক ধাপে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে, গত ৩ জুন জেলায় সর্বোচ্চ ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। কয়েক ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনের নোংরা পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। আজ রবিবার কোন বৃষ্টি না হলেও শহরের নিচুঅঞ্চল বিশেষ করে শহরের খড়কি ও ৭ নাম্বার ওয়ার্ডে বিভিন্ন সড়ক ও বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। এতে ভোগান্তি পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট, কালভার্ট বেদখল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিস্কার করে না পৌরসভা, সে কারণেই এ ভোগান্তি।
শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত এক যুগ শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়নিস্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিস্কাশিত হতে পারছে না। ওই পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পৌরসভা গত এক যুগেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।